সিলেট: সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার–গোলাপগঞ্জ) আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জবাসী দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে বঞ্চনা ও জুলুমের শিকার। জনগণ আস্থা রাখলে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই দুই উপজেলার চিত্র পাল্টে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
শনিবার (২২ নভেম্বর) বিয়ানীবাজারে ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি প্রতিশোধ নিতে এসেছি— উন্নয়নের প্রতিশোধ, বঞ্চনার প্রতিশোধ। জনগণ আমাকে সুযোগ দিলে সব সমস্যার সমাধানে তিন বছরের মধ্যেই দৃশ্যমান পরিবর্তন আনবো।’
তিনি বলেন, ‘এলাকার যুবসমাজ সমাজের জন্য বোঝা নয়— তারা হবে মূল্যবান সম্পদ। কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা হবে।’
চিকিৎসা খাতের নাজুক অবস্থা তুলে ধরে তিনি স্থানীয় হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা, প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষা ও বিশেষায়িত চিকিৎসক সিলেট–ঢাকা থেকে এনে সেবা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি ভোটার কার্ডের মতো ডিজিটাল হেলথ কার্ড চালুর মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই চিকিৎসা গ্রহণ সহজ করার পরিকল্পনার কথা জানান।
প্রবাসীসেবায় দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি আইডি কার্ড বা পাসপোর্টের জন্য ধর্ণা দিতে হবে না। এয়ারপোর্টেও হয়রানি বন্ধ হবে।’
গ্যাস সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্যাসে দেশ চলবে, আর আমাদেরই গ্যাস দেওয়া হবে না— এটা হতে পারে না। তিন মাসের মধ্যে গ্যাস সমস্যা সমাধান না হলে জনগণকে নিয়ে গ্যাস হেল্ড-অ্যাপ করা হবে।’
তিনি অভিযোগ করেন— গত দেড় বছরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে মাথা বিক্রি করে দেশকে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে যারা, তাদেরকে ভোট দিলে দেশ ধ্বংস হবে।
এছাড়া কেন্দ্র দখলের চিন্তা যারা করবেন তাদের ‘কঠিন পরিণতি’র হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভয় দেখাবেন না। ৫৪ বছর প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসেছি। যারা টিয়ারশেলের কাছে মাথা নত করে, তারা জামায়াত–শিবিরের শক্তির সামনে টিকতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ানীবাজার–গোলাপগঞ্জ আর বঞ্চিত থাকবে না। উন্নয়নের জন্য এবার দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিতে হবে। এই ভোট জনগণের আমানত— আমরা সেই আমানত রক্ষা করবো।’

ডাকসুর সাবেক জিএস এস এম ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে দুই শতাধিক নেতাকর্মী হারানো দল দেশের নিরাপত্তা দিতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘এমপির কাজ শুধু বিচার-শালিস বা রোড-কালভার্ট করা নয়; যুবকদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা সংস্কার ও চাঁদাবাজিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।’
তিনি ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ফয়জুল ইসলাম, পৌর আমির কাজী জমির হোসাইনসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশস্থলে যোগ দিতে দুপুর থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন–ওয়ার্ড থেকে গণমিছিল এসে শহর প্রকম্পিত করে। লাল–সবুজ টিশার্ট, দাড়িপাল্লার ব্যানার–ফেস্টুনে সজ্জিত হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতি বিয়ানীবাজার শহরকে সরব করে তোলে। ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান প্রার্থী সেলিম উদ্দিন।
রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছাত্র–যুব সমাবেশের জনসভা শেষ হয়।