কুমিল্লা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৯ ডিসেম্বর দাউদকান্দির নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে গৌরবের অক্ষরে। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সুপরিকল্পিত আক্রমণে ভেঙে পড়েছিল পাক হানাদার বাহিনীর দাউদকান্দির শেষ ঘাঁটি।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে দিবসটি উপলক্ষে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে বিজয় র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম, নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরীন আক্তারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।
এ দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে দিশেহারা পাক সেনারা পিছু হটে গেলে দাউদকান্দির বীর যোদ্ধারা আরও সাহসী হয়ে ওঠেন। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, শহীদনগর ওয়্যারলেস কেন্দ্র এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের ডাক বাংলোতে অবস্থানরত পাক বাহিনীর ওপর একযোগে উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধারা।
মোহাম্মদপুর ও ডাকখোলা ক্যাম্প এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি যুদ্ধের গতি তীব্র করে তোলে। একই সময়ে পূর্ব দিক থেকে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারির কাভারিং ফায়ারের কারণে পাক সেনারা পশ্চিমমুখী পালাতে বাধ্য হয়। শহীদনগর ওয়্যারলেস কেন্দ্র ছাড়তে গিয়ে তারা দাউদকান্দি সদরের দিকে ছুটে যায়।
তীব্র গোলাগুলির আতঙ্কে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের গ্রামগুলোর মানুষ গোমতী নদীর দিকে ঝাঁপিয়ে আশ্রয় নেয়। ৮ ডিসেম্বর রাতভর ও ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টা পর্যন্ত চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাক সেনারা সড়ক ও জনপদের ডাক বাংলোতে আশ্রয় নিলেও সেখানে টিকে থাকতে পারেনি। তারা লঞ্চযোগে মেঘনা নদী পেরিয়ে গাজীপুর হয়ে চারটি জাহাজে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
সেদিন সন্ধ্যার ঠিক আগমুহূর্তে দাউদকান্দির আকাশে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকা। মুক্ত হয় দাউদকান্দি—মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের সাক্ষীতে আরেকটি গৌরবময় অধ্যায় রচিত হয় জাতির ইতিহাসে।