উপজেলা নির্বাচনের ডঙ্কা বেজেছে, বিএনপি চুপ, দৌড়ঝাঁপে আ. লীগ
৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪১
।। সুমন মুহাম্মদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রাজশাহী : জাতীয় সংসদের নির্বাচন পরবর্তী সকল প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যেই ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ মার্চ মাসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর ইসির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণার পরই প্রস্ততি নিতে শুরু করেছেন রাজশাহীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের টিকিট পেতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
রাজশাহীতে গতবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করেছিলেন এবার তাদের তৎপরতা বেশি। এর কারণ ধরা হচ্ছে সংসদ নির্বাচনে বিপর্যস্ত বিএনপিবিহীন নির্বাচনী মাঠ অনেকটা ফাঁকাই থাকবে। ফলে এই ফাঁকা মাঠে ভোটের লড়াইয়ের জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থিতা পেতে উন্মুখ হয়ে উঠেছে।
দলটির একটি সূত্র বলছে, আগ্রহী প্রার্থীরা কেউ কেউ সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের শরণাপন্ন হতে শুরু করেছেন। রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলার জন্য ২০ এর অধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।
বিগত সময়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে দলের সমর্থন থাকলেও প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী মার্চে সারাদেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় মার্চ মাসকে উপজেলা নির্বাচনের জন্য বেছে নিতে চায় কমিশন। মার্চে নির্বাচন করতে হলে জানুয়ারি শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে যারা নির্বাচন করতে চান তাদেরকে দলের মনোনয়ন নিতে হবে। আর সঙ্গে জমা দিতে হবে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যায়নপত্র। ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে হলে মনোনয়নের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যার কারণে নড়ে চড়ে বসেছেন সম্ভাব্য ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও স্থানীয় এমপির সঙ্গে বিরোধের কারণে অনেকের কপাল পুড়তে পারে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও দলের সমর্থন নিতে হয়েছে প্রার্থীদের। রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পান গোদাগাড়ীতে একেএম আসাদুজ্জামান আসাদ, তানোরে গোলাম রাব্বানী, পবায় মুনসুর রহমান, মোহনপুরে আব্দুস সালাম, বাগমারায় জাকিরুল ইসলাম সান্টু, দুর্গাপুরে নজররুল ইসলাম, পুঠিয়ায় প্রথমে আহসানুল হক মাসুদ ও পরে শাহরিয়ার রহিম কনক, চারঘাটে ফখরুল ইসলাম ও বাঘায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন আজিজুল আলম। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বাগমারায় জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও দুর্গাপুরে নজরুল ইসলাম।
গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসাহাক বিএনপির মনোনয়নে গতবার নির্বাচিত হলেও এখন তিনি আওয়ামী লীগের নেতা। ফলে এবার কপাল পুড়তে পারে গতবারের মনোনয়ন পাওয়া আসাদের। তবে এ উপজেলায় আরও দু’ একজন এবার দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে।
তানোরে গতবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে উপজেলায় পরাজিত হন গোলাম রাব্বানী। এমপির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে এবার তার মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ সংসদ নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন নেবার জন্য গোদাগাড়ী-তানোর আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে কপাল খুলতে পারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের।
পবায় এবারও মনোনয়ন চাইতে পারেন মুনসুর রহমান। তবে এবার তার সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী, সাধারণ সম্পাদক মাজদার রহমান সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক ফারুক হোসেন ডাবলু। আর মোহনপুরে এবার আব্দুস সালাম ছাড়াও উপজেলার নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য স্বপ্ন দেখছেন আরও কয়েকজন নতুন মুখ।
বাগমারায় এবার মনোনয়নে টান পড়তে পারে বর্তমান চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুর। এখানে এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অনিল কুমারসহ আরও কয়েকজন নতুন মুখ। দুর্গাপুরে আবারও মনোনয়ন চাইবেন নজরুল ইসলাম। তবে এবার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ও পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জাল হোসেনসহ আরও কয়েকজন নতুন মুখ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন। পুঠিয়ার আহসানুল হক মাসুদ এমপিতে মনোনয়ন না পেলেও তালিকার সামনের সারিতে ছিলেন তিনি। এবার তিনি উপজেলায় মনোনয়ন চাইবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক ও শাহরিয়ার রহিম কনক দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এই দুটি উপজেলা পুঠিয়া-দূর্গাপুর আসনে নতুন ভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ডা. মুনসুর রহমান। এর আগে পর পর দুইবার এমপি ছিলেন আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এই নেতাদের রাজনৈতিক লড়াইয়ে কার ভাগ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের মনোনয়ন টিকিট জুটবে তা বলা অনেকটাই মুশকিল।
চারঘাটে এবারো উপজেলায় মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম ও একরামুল হক। আর বাঘায় এবার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘার সাবেক মেয়র আক্কাস আলী ছাড়াও আরও দুতিনজন এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সারাবাংলা/এসএম/কেকে