কারাদণ্ড-জরিমানা, তবু চলছে জাটকা নিধন
২৪ মার্চ ২০১৯ ০৯:০৯
লক্ষ্মীপুর: অভয়াশ্রম এলাকায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল দুমাস সব প্রজাতির মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষণা বাস্তবায়নে কোস্টগার্ড অভিযান চালাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা-কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। তারপরও নির্বিচারে জাটকা নিধনের মহোৎসব চলছে নদীর পাড়ে।
তবে জেলেরা বলছেন, দাদন ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের চাপে পড়ে তারা জাটকা শিকার করছেন।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনাল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষিত এলাকায় জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করছেন। তাদের বেশি দেখা যাচ্ছে মেঘনার কমলনগর, সদর উপজেলা ও রামগতিতে। আড়তে নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে জাটকা।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
জেলেরা অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় দাদনদার-মৎস্য আড়তদাররা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আঁতাত করে সঠিক সময়ে তাদের আসা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ বন্ধ রেখেছেন। স্থানীয় দাদনদার-মৎস্য আড়তদারা উদ্দেশ্য ‘যাতে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরতে বাধ্য হয়। এ জন্য তারা মাছ ক্রয় করতে মেঘনা নদীর পাড় সংলগ্ন সদর উপজেলার কাচিয়ার খাল, গাজির খাল, কমলনগরের মতির হাট, বাতির খাল, জনতা বাজার, হেতনার খাল, লুদুয়া, মাতাব্বর হাট, কাদির পন্ডিতের হাট, কাইচ্চার খাল, হাজিমারা, পুরান বেড়ি, জালিয়ার চর, মজু চৌধুরীর হাট, বুড়ির গাঁ এলাকায় আড়ত খুলে বসেছে। বরফ কলগুলো থেকে বরফ সংগ্রহ করে মৎস্য ব্যবসায়ীরা জাটকা ইলিশ মজুত করে তা বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।
চর কালকিনি এলাকার জেলে আওলাদ হোসেন জানান, এ এলাকার অনেক জেলে তার মতো দাদনদার মৎস্য আড়তদারদের টাকা পরিশোধের নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ে মেঘনায় মাছ ধরতে নদীতে নেমেছেন। সরকার নদীর পাড়ের আড়তগুলো বন্ধ রাখলে ও কোস্টগার্ড এবং মৎস্য বিভাগের নিয়মিত নদীতে তদারকি থাকলে কোনো জেলে আর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে নামত না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও দাদন ব্যবসায়ী শাহা আলম জানান, এরইমধ্যে তারা অনেক টাকা জেলেদের জাল ও নৌকা ক্রয়ে দাদন দিয়েছেন। সে টাকা উত্তোলনে আড়তে মাছ ক্রয়ে দোষের কী? নদীতে তো কোস্টগার্ড মাছ ধরতে দিচ্ছে আর গোপনে টাকা নিচ্ছে।
রামগতির চর কালকিনি এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যান মো.সাইফুল্লাহ জানান, কোস্টগার্ড জেলেদের ধরার পর মাছ ও জাল নিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। যার কারণে এ সুযোগে জেলেরা নদীতে মাছ ধরছেন। যার ফলে আড়তদাররা সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে আড়ত পরিচালনা করছেন।
লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় দায়িত্বরত কোস্টগার্ডের কন্ডিজেন্ট কমান্ডার মো. শাহাজামাল জানান, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে তা সত্য নয়। আইন অমান্যকারী জেলেদের ধরতে কোস্টগার্ড এবং মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে নদীতে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্লাহ জানান, প্রতিদিনই নদীতে মৎস্য বিভাগের লোকজন অভিযান পরিচালনা করছেন। জনবল কম থাকায় অভিযানের ফাঁকে কিছু জেলে নদীতে মাছ শিকারে নামছেন। পরে ওই জেলেরা ধরা পড়ছেন। এ পর্যন্ত সদর উপজেলায় দুইজনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/একে