Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংসারে বড্ড অভাব, আগামী মাস থেকে লেখাপড়া বন্ধ হবে বিজয়ের!


২৮ জুন ২০১৯ ২৩:০৫

কিশোরগঞ্জ: ‘আপনি শারীরিক প্রতিবন্ধী, সমাজসেবা অধিদফতরের কার্ডও আছে আপনার। সেখান থেকে কি কোনো ভাতা বা সহায়তা পান’ উত্তরে মাসুদ রানা বিজয়ের জবাব, ‘না। কার্ড হওয়া পর্যন্তই। আমি সেখান থেকে কোনো ভাতা পাওয়ার চেষ্টা করিনি। কারণ নিজেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। একটি চাকরি করতে চাই।’

এবার মনোবল দৃঢ় করে বিজয় বলেন, ‘জানেন। আমাদের সংসারে বড্ড অভাব। বাবা বাবুল মিয়া সরকারি এক সার কারখানায় নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ করেন। কিন্তু তার উপার্জনে সংসার চলে না। এছাড়া বাবা-মায়ের অসুখও আছে। ওষুধপত্র কিনতে প্রতি মাসে টাকা লাগে। আমি চাইছি নিজে কোনো উপার্জন করে আমার লেখাপড়াটা চালু রাখতে। যদি উপার্জন করার কোনো পথ খুঁজে না পাই তাহলে আগামী মাস থেকে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

বিজয় বলেন, ‘গ্রাম থেকে আমার কলেজে যাওয়া আসা করতে প্রতিদিন একশ টাকা লাগে। এছাড়া বই-খাতা কেনার খরচও তো আছে। এখন কলেজে যাওয়ার টাকাও নেই আমার কাছে। কষ্ট করে এতদূর এসেছি। টাকা-পয়সার অভাবে লেখাপড়া এখানেই শেষ হয়ে যাবে।’

তবে একটি চাকরি পেলে লেখাপড়া সহজ হবে বিজয়ের। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার সুকিয়া গ্রামের মাসুদ রানা বিজয় বলেন, ‘আমি কারও দয়া বা সহায়তা চাই না। আমি নিজে কাজ করতে চাই, একটা চাকরি করে উপার্জন করতে চাই।’

‘আপনার একটা হাত শারীরিকভাগে অন্যরকম। কীভাবে অন্যদের মতো কাজ করবেন’ জানতে চাইলে বিজয় বলেন, ‘আমি তো আমার বাম হাতটিকে কাজে লাগাচ্ছি। আমি ছয়মাসের একটি কম্পিউটার কোর্সও করেছি। মিনিটে ১৫-২০টি শব্দ টাইপ করতে পারি। আমি আত্মবিশ্বাসী, আমাকে কোনো কাজ দিলে আমি ঠিকই করতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

এ প্রতিবেদককে বিজয় জানান, তাদের সংসারে অভাব-অনটনের কথা। তার এক কর্মজীবী ভাই নিজের মতো নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ইচ্ছা থাকলেও বাবা-মাকে আর্থিকভাবে তেমন সহায়তা করতে পারেন না।

বিজয় বলেন, ‘কোনোকালে আমাদের কোনো জমি-জমা ছিল না। জমি থাকলে হয়ত চাষাবাদ করে কিছুটা অভাব পূরণ করতে পারতাম।’

বিজয় ২০১৪ সালে এসএসসিতে ৩ দশমিক ৬৩ জিপিএ ও ২০১৭ সালে এইচএসসিতে ২ দশমিক ৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে তিনি হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

অভাবের তাড়নায় ছাত্রজীবনেও সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা করেছেন মাসুদ রানা বিজয়। অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার একটি হাতের শক্তি নেই। এই হাত দেখে আমাকে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি মুখের সামনে বলা হয়েছে, আমি তেমন কাজ করতে পারব না। শিক্ষার যত উচ্চশিখরে এগুচ্ছি ততই আমার মন-মানসিকতা দুর্বল হয়ে আসছে। মনে প্রশ্ন জাগে, আদৌ কি আমি কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবো?’

অসহায়ত্ব প্রকাশ করে মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী বলে অবহেলার শিকার হচ্ছি। সমাজের অনেকেই আমাকে দেখে অসহায় একজন মানুষ হিসেবে। কিন্তু আমি এভাবে থাকতে চাই না। কারও করুণা চাই না, অন্তত কর্মসংস্থানের সুযোগ চাই।’

কেবল নিজেকে দাঁড় করানোর স্বপ্ন নয়। শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুদ রানা বিজয় স্বপ্ন দেখেন তার মতো অন্যদেরকেও স্বাবলম্বী করার। স্বপ্নের কথা প্রকাশ করে বিজয় বলেন, ‘যারা আমার মতো শারীরিক প্রতিবন্ধী, আমি চাই তাদের জন্য কিছু করতে। তারা যেন সমাজের চোখে অবহেলিত না থাকে। তারা যেন যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ পায়, সেই ব্যবস্থাটুকু করতে চাই।’

সারাবাংলা/একে

চাকরি প্রতিবন্ধী বিজয়

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর