মৌলভীবাজারে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাতভর কিশোর নির্যাতন
৩ জুন ২০২০ ০০:৪৮
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে ১৬ বছরের কিশোরের উপর রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। চুরির অপবাদে রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা অবধি খুঁটির সঙ্গে হাত বেঁধে রাখা হয় ওই কিশোরের। এ সময় তার ওপর নির্যাতন করেন ওই ইউপি সদস্য।
গত ১৪ মে কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কিশোরের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। নির্যাতনের শিকার মো. মুস্তাফিজ (১৬) কুলাউড়ার টিলাগাও ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে।
মুস্তাফিজের চাচা সারাবাংলাকে বলেন, গত ১৪ মে ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া তার দলবল নিয়ে আমার ভাতিজাকে চুরির অপবাদ দিয়ে সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল আটটা পর্যন্ত এক গ্রাম পুলিশের বাড়ির বারান্ধায় বেঁধে রেখে নির্যাতন চালায়। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এখনো সে সেরে ওঠেনি।
মুস্তাফিজের চাচা এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্যাতনের সময় স্থানীয়রা শিশুটিকে নির্যাতন না করার জন্য অনুরোধ করলেও ইউপি সদস্য তা মানেননি। মুস্তাফিজের চাচা বলেন, আমাদের পরিবার গরীব। পুলিশের কাছে গিয়ে যে অভিযোগ করবো সেই সাহসও পাচ্ছিনা। স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দেওয়া হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করায় আমরা তাদের কথা বিশ্বাস করে বসে আছি।
তিনি বলেন, মুস্তাফিজ এখনো রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে আমাকে আর মারবেন না বলে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। এই ঘটনার পর থেকে সে আর স্বাভাবিক নয়। কারো সঙ্গে কথা বলে না। একা একা নিজে নিজে কথা বলে। স্থানীয়ভাবে সমাধানের কথা বলায় আমরা সাংবাদিকদেরও এ ঘটনা জানাইনি কিন্তু আজ পর্যন্ত ইউপি সদস্য এ বিষয় নিয়ে কোনো কথাই বলছেন না।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটি এম ফরহাদ চৌধুরী মঙ্গলবার সারাবাংলাকে জানান, আমি কিছুক্ষণ আগেই ঘটনা জেনেছি এবং ছেলেটির নির্যাতনের পর তুলা একটি ছবি পেয়েছি। আগামীকাল এ বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
এ বিষয়ে টিলাগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার মুঠোফোনে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।
টিলাগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক বলেন, আমি করোনার কারণে কর্মহীন মানুষদের বাড়িতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে ব্যস্ত দিন পার করছি। তাছাড়া নির্যাতনের শিকার মুস্তাফিজের পরিবার থেকেও আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এমন জঘন্য একটি ঘটনা ঘটেছে যদি তারা আমাকে জানাতো আমি তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম।
তিনি বলেন, শিশু-কিশোরদের উপর এমন নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। মুস্তাফিজ যদি অপরাধ করেই থাকে তার জন্য আইন রয়েছে। তাই বলে রাতভর বেঁধে রেখে এমন মর্মান্তিক নির্যাতন করার অধিকার কারো নেই।