Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কক্সবাজারে শিশু ধর্ষণ প্রতিরোধে কঠোর প্রশাসন,বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৫


২৫ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:১৩ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:২৩

।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

কক্সবাজার: জেলায় গত চার মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯ শিশু। এর মধ্যে বাবার হাতে কন্যা ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে। শুধু ধর্ষনের ঘটনাই ঘটছে না, ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে এই কোমলমতি শিশুদের। এসব ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গত চার মাসে বন্দুকযুদ্ধে ৫ ধর্ষক নিহত হয়েছে।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন জানান, গত ৪ মাসে ৫ জন ধর্ষক বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই শিশু ধর্ষক। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই আসামীদের গ্রেফতার করতে গেলে তারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। আর র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতেই মারা পড়ে ধর্ষকেরা।

তবে আইনজীবীরা বলছেন‘বন্দুকযুদ্ধে ধর্ষক নিহতের ঘটনাটি যথাযথ নয়’। দেশের প্রচলিত আইনেই তাদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আইনে তাদের ফাঁসিরও বিধান রয়েছে।

গত সোমবার দিবাগত রাতে কক্সবাজারের পেকুয়া আর চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সীমান্তবর্তী এলাকায় র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আব্দুল হাকিম মিন্টু (৩০) নামে একজন নিহত হয়। এ সময় ঘটনাস্থল ধেকে একটি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ৫ রাউন্ড গুলি ও ২ টি খালি খোসাও পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় ১০ বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষনের অভিযোগে মামলা রয়েছে।

ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের ওই শিশুটি প্রাণে বাচঁলেও মো: আজিজুল হক (১৮) এর হিংস্রতা থেকে বাঁচতে পারেনি কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শিলখালী এলাকার সাত বছরের শিশু সাদিয়া সুলতানা ওম্মী। আজিজ সদর উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের গোমাতলীর জাগির হোসেনের ছেলে। সে অস্মীকে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। পুলিশের হাতে আটকের পরে গত সোমবার বিকেলে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজীব কুমার দেবের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে সে এ কথা জানায়।

বিজ্ঞাপন

গত ২৬ মার্চ দুপুরে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের উলুবনিয়া এলাকায় চার বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষক করে আব্দুর রহিম (২০) নামে এক যুবক। পরে ৩১ এপ্রিল ওই এলাকায় র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ধর্ষক আব্দুর রহিম। এসময় তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও বেশকিছু গুলি পাওয়া যায়।
এর মাস খানেক আগে কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়ায় তিন বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা করে মো. সেলিম নামে এক যুবক। ঘটনার এক সপ্তাহ পর সদরের খুরুশকুলে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় মো. সেলিম।

গত ৫ মার্চ মহেশখালী উপজেলায় ১৩ বছর বয়সী নিজ কন্যাকে ধর্ষণ করে এক পাষন্ড পিতা। শহরের একটি হোটেলে আটকে রেখে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

এছাড়া গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করার অপরাধে আবুল মনজুর নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। সে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের শফিক আলমের ছেলে।

গত ২২ এপ্রিল রাতে চকরিয়া প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার সময় সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করার জন্য মাতামুহুরী সেতুর নিচে ধরে নিয়ে যায় নুরুল ইসলাম নামে এক যুবক। পরে স্থানীয়রা ওই যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এঘটনায় ওই শিশুর পরিবার মামলা দায়ের করে।

এছাড়া গত ১৩ এপ্রিল রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ঠুটারবিল এলাকায় ছয় বছরের এক ছেলে শিশুকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করে নুরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় তাঁকে তাৎক্ষণিক আটক করে পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জনান, শুধু বাইরে নয় ঘরের মধ্যেও নারী ও শিশুদের নিরাপদে রাখা উচিত। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। যাতে করে অন্যরা বুঝতে পারে ধর্ষণ করলে তাদের ক্ষেত্রেও এই অবস্থা হবে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দেওয়া হোক মায়ের জাতি নারীদের প্রতি সম্মান দেওয়ার বিষয়টি।

বিজ্ঞাপন

শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুনবাসন কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক জেসমিন আকতার বলেন, ধর্ষকদের জনসম্মুখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিৎ। আর জরুরি হচ্ছে ধর্ষকের পরিচয় ভালভাবে প্রচার করা। শাস্তির চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে যেন এই ধরনের জঘন্য ঘটনা আর না ঘটে। এর জন্য বাড়াতে হবে সচেতনতামূলক প্রচারণা।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, বন্দুকযুদ্ধে ধর্ষক নিহতের ঘটনায় তিনি বিশ্বাসী নন। এর জন্য যথাযথ আইন রয়েছে। তবে এটাও ঠিক, অনেক সময় আসামী বা ধর্ষক উচ্চ আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যায়।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট নুরুল ইসলাম জানান, অপরাধীদের হত্যা করার বিষয়টি তিনি সর্মথন করেন না। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আর বিচারের মাধ্যমেই প্রকৃত আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

সারাবাংলা/কেএমএম/এমএস

বিজ্ঞাপন

২০২৫ সালেই বার্সায় ফিরছেন মেসি?
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর