চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় সরকারি খাসজমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতের ঘটনায় যুবদল নেতা রোকন উদ্দিন মেম্বারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরে রোকনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা জমি দখলে গেলে এলাকার লোকজন তাদের ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে একজন নিহত ও কমপক্ষে ১৪ জন আহত হন।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলীয় নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন মেম্বারকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।
বহিষ্কৃত রোকন উদ্দিন মেম্বারের কোনো অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না এবং যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি জঙ্গল সলিমপুরের একটি ঘটনা পত্রপত্রিকায় এসেছে। যাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। শুনেছি, পাঁচ-ছয় মাস আগেও তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ কেন্দ্রে গেছে। সব মিলিয়ে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’
এর আগে, গত ৪ অক্টোবর সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর আলীনগর এলাকায় গণপিটুনিতে একজন নিহত ও অন্তত ১৪ জন আহত হন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, যুবদল নেতা রোকন উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী খাস জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার করতে সেখানে গিয়েছিল। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেখানে আগে থেকে বসবাস করা ‘দখলদারদের’ বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা শুরু করে। তখন আলীনগরের বাসিন্দারা অর্থাৎ আগের দখলদারেরা তাদের ঘেরাও করে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। আরও কমপক্ষে ১৪ জন আহত হন।
হামলাকারীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া একটি দেশীয় এলজি, ৮টি শটগানের গুলি দুটি পিস্তল ম্যাগাজিন, একটি চাপাতি, একটি লোহার হাতুড়ি ও পিস্তলের ৩টি গুলি এলাকার লোকজন পুলিশকে দেয়।
অবশ্য অভিযুক্ত রোকন উদ্দিন মেম্বার তখন এ ঘটনার তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সারাবাংলার কাছে অস্বীকার করেন।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আলীনগরে সংঘাতের ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঘর ভাঙচুর ও লুটের ঘটনায় আহত মোহাম্মদ ফারুক বাদী হয়ে রোকন উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় এজাহারনামীয় ২০ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ফারুক হোসেন নামে আরেকজন ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করেছেন। এছাড়া নিহত খলিলুর রহমানের বাবা অলি রহমান ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৪০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
এসব মামলায় জাবেদ, জয়নাল, জিহাদ নামে তিনজনকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।