চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিছিল-সমাবেশের ওপর পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপক্ষো করে চট্টগ্রাম বন্দর ভবন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিল শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। তবে পুলিশের বাধায় তারা বন্দর ভবন পর্যন্ত যেতে পারেনি। পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা পর সংগঠনটি আগামী ১ নভেম্বর ‘শ্রমিক অনশনের’ ডাক দিয়ে সর্বস্তরের জনতাকে এ আন্দোলনে শরিক হবার আহ্বান জানায়।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ (এনসিটি) চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করে স্কপ, যাতে হাজারখানেক শ্রমিক-কর্মচারী অংশ নেন।
সকাল ১১টার দিকে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আগ্রাবাদের বাদামতলী মোড়ে জমায়েত হন শ্রমিকরা। সেখানে সমাবেশের আয়োজন করে স্কপের চট্টগ্রাম জেলা শাখা। এ সময় তারা ‘চট্টগ্রাম বন্দর-বিদেশিদের দেব না, আমার মাটি আমার মা-বিদেশিদের হবে না’ এমন নানা স্লোগানে সমাবেশস্থল মুখর করে রাখেন।

নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আগ্রাবাদের বাদামতলী মোড়ে জমায়েত হন শ্রমিকরা।
সমাবেশে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত বলেন, ‘বন্দর কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, বন্দর ১৯ কোটি মানুষের। শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে বিদেশিদের বন্দর দেওয়া যাবে না। বন্দরে শ্রমিকদের ঢুকতে না দিয়ে, ৩০ টাকার গেট পাস ২০৩ টাকা করে বিদেশিদের বন্দর দিয়ে দেবেন, তা হবে না। পত্রিকায় দেখলাম, কর্মকর্তাদের বেতন দেড়-দুই লাখ টাকা হচ্ছে আর এদিকে শ্রমিকদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে।’
অনশনের ডাক দিয়ে তপন দত্ত বলেন, ‘আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে শত শত শ্রমিক–কর্মচারী সকাল ১০টায় অনশনে বসব, আপনারা শ্রমিক-কর্মচারীরা সবাই সেখানে আসবেন, বন্দরে খরচ বাড়লে ক্রেতাদের ওপরও প্রভাব পড়বে, তাই সাধারণ মানুষকেও অনুরোধ করছি এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে একতরফাভাবে নেয়া সিদ্ধান্তকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহাল রেখেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের কৌশলগত সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। শ্রমিকদের বেকার করে দেওয়ার, শ্রমিকদের পেটে লাথি মারার কোনো ষড়যন্ত্র আমরা সফল হতে দেব না, যদি শ্রমিকদের দাবি মানা না হয়, তাহলে আমরা সভা-সমাবেশ, হরতাল— সব কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
স্কপ নেতা জাহেদ উদ্দিন শাহিনের সঞ্চালনায় সমাবেশ আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এসকে খোদা তোতন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম, বিএলএফের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হক শিমুল, বিএফটিইউসির সভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক হুনি, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল নেতা ইব্রাহিম খোকন এবং ডক ইয়ার্ড শ্রমিক দল নেতা তসলিম হোসেন সেলিম।
সমাবেশ শেষে আগ্রাবাদ থেকে মিছিল নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা বন্দর ভবন অভিমুখে যাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু বারিক বিল্ডিং মোড়ের আগে বিদ্যুৎ ভবনের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। পুলিশের সঙ্গে তারা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। পরে স্কপ নেতারা শ্রমিকদের শান্ত করে মিছিল নিয়ে আবারও আগ্রাবাদের দিকে ফিরে যান।
নগরীর ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ভবনসহ আশপাশের এলাকায় একমাসের জন্য মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাই ডবলমুরিং থানার শেষ সীমানা পর্যন্ত তাদের মিছিল করতে দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ৩০ দিন চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন বারেক বিল্ডিং মোড়, নিমতলা মোড়, ৩ নস্বর জেটি গেট, কাস্টমস মোড়, সল্টগোলা ক্রসিংসহ বন্দর এলাকায় যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক, শ্রমিক বা সামাজিক সংগঠনের মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পথসভা নিষিদ্ধ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।