চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গোপসাগরে বড় শিকারি মাছ দ্রুত কমে যাচ্ছে বলে তথ্য দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এর ফলে সাগরে জেলিফিশ বেড়ে পরিবেশগত ভারসাম্য বিপদজনক হয়ে উঠছে বলে মত দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল পেনিনসুলায় ‘মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ব্লু ইনোভেশনস: সেইফগার্ডিং ওশান হারমনি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এক সেমিনারে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘২০২৫ সালের সামুদ্রিক জরিপ অনুযায়ী, গত সাত বছরে বঙ্গোপসাগরে ছোট পেলাজিক (সমুদ্রের উপকূল ও জলরাশিতে বিচরণকারী মাছ) মাছের মজুত হ্রাস পেয়েছে ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ১ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিকটন থেকে মজুত নেমে এসেছে ৩৩ হাজার ৮১১ টনে। সাগরে বড় শিকারি মাছ কমে যাওয়ায় জেলিফিশের আধিক্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য বিপদজনক সংকেত। এগুলো হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের ইকোসিস্টেমে দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত।’
ইলিশকে জাতীয় ও বৈশ্বিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে। কিন্তু এই সম্পদ এখন হুমকির মুখে। সাগরের প্রতিটি স্তরে ইলিশ রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।’
তবে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দায়িত্বশীল আহরণ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত এবং কার্যকর সুশাসন অত্যন্ত জরুরি। ব্লু ইকোনমিকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করায় বিজ্ঞান–নীতি–কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সমন্বয়ে একটি টেকসই সামুদ্রিক ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে অত্যন্ত দক্ষ গবেষক ও বিজ্ঞানী আছেন। নীতিনির্ধারণে তাঁদের গবেষণালব্ধ তথ্য প্রাধান্য দিতে হবে।’
ইকোসিস্টেম সুরক্ষা, সমুদ্রভিত্তিক পরিকল্পনা এবং জলবায়ু–সহনশীল মৎস্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও অবৈধ, অপ্রকাশিত এবং অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা একক দেশের পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এজন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।’
সেমিনারে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের বিজনেস স্কুলের ড. পিয়ের ফাইলার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সের পরিচালক ড. শেখ আফতাব উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।
এদিকে দুপুরে চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমি প্রাঙ্গণে ৪৪তম পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এবং মেরিন ফিশারিজ একাডেমির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ হাসান বক্তব্য দেন।