Friday 12 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চোরের ভয়ে দরজায় তালা, প্রাণ নিয়ে গেল আগুন


১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:১৬ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:২৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।।স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চোরের ভয়ে ঘরের ভেতরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে ঘুমাতেন চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার চাক্তাই বেড়ামার্কেট এলাকার বস্তির বাসিন্দারা। গভীর রাতে যখন ঘরে আগুন লাগে তখন সবাই গভীর ‍ঘুমে ছিলেন। তাড়াহুড়ো করে বেরুতে গিয়ে দরজায় লাগানো তালায় বাধে বিপত্তি। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে চাবি খুঁজে পাওয়া যায়নি, তালাও ভাঙতে পারেননি। ঘরে ভেতর জীবন্ত দগ্ধ হয়ে গেছে প্রাণ।

এই কাহিনী পুড়ে মারা যাওয়া রহিমা আক্তারের (৫০) পরিবারের। রহিমার সঙ্গে পুড়ে মারা গেছে তার মেয়ে নাজমা (১৪), ছেলে জাকির হোসেন (৯) এবং আরেক মেয়ে নাসরিনও (৪)। একই ঘরে থাকা রহিমার এক মেয়ে নারগিস (১০) কোনোমতে প্রাণে বেঁচেছেন।

বিজ্ঞাপন

বস্তির প্রবেশমুখের প্রথম বসতি ‘সাত্তার কলোনিতে’ একটি মুদি দোকান করতেন স্থানীয় সুরুজ আলীর স্ত্রী রহিমা। দোকান সংলগ্ন সেমিপাকা ঘরে চার সন্তান নিয়ে থাকতেন রহিমা। সুরুজ আলী আরেক স্ত্রী নিয়ে কাছেই আরেকটি কলোনিতে থাকেন।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের বেড়ামার্কেট বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে ৮ জনের মৃত্যু

রহিমার মেয়ে নারগিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুন লাগার পর আমার মা চিৎকার করছিলেন আর দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দরজা ভাঙতে পারেননি। আমার ভাই জাকির দোকানের পেছনের দরজা ভেঙে দিলে আমি সেদিকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসি। আমার ভাই অন্যদের বের করবার চেষ্টা করতে গিয়ে আর বেরুতে পারেনি।’

একই কলোনিতে রহিমাদের ঘরের অদূরেই কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা সালমা আক্তারের বাসা। সালমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাতে চোরের উৎপাত বেশি। সেজন্য আমরা দরজার ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে ঘুমাই। প্রথমে খালের পাশে বস্তিঘরে আগুন লাগে। আমি আগুন দেখার পর চিৎকার করতে থাকি। তালা খুলতে গিয়ে দেখি চাবি পাচ্ছি না। তখন দা দিয়ে তালা ভেঙে ফেলি। তারপর বেরিয়ে আসি। রহিমাদের ঘরেও তালা ছিল। তারা তালা ভাঙতে না পারায় বেরোতে পারেনি।’

সাত্তার কলোনির আরেক বাসিন্দা মধ্যবয়সী রুমা আক্তার বলেন, ‘চোরের ভয়ে সবাই দরজায় তালা দিয়ে ঘুমায়। কিন্তু আমি তালা দিই না। কারণ আমি ৭ বছর বয়স থেকে এই এলাকায় আছি। কে চোর, কে ডাকাত, কে ছিনতাইকারী সব আমি চিনি। তারাও আমাকে চেনে। তারা কোনোদিন আমার ঘরে চুরি করবে না।’

তবে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রনব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুন যখন লাগে, তখন সবাই গভীর ঘুমে ছিল। আসলে ঘুমন্ত অবস্থায়ই তারা পুড়ে মারা গেছে।’

সাত্তারের কলোনিতে আরও এক পরিবারের দুজন মারা গেছেন। এরা হলেন- আয়শা আক্তার (৩৭) ও তার ভাগ্নে সোহাগ (১৮)। এছাড়া আয়শার ১১ বছর বয়সী মেয়ে ঋতু আক্তারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আয়শার ভাই স্থানীয় তেলের দোকানের কর্মচারি মনির হোসেন।

মনির সারাবাংলাকে জানান, তার ভাগ্নে সোহাগ চা-দোকানে কাজ করত। খালার বাসায় সে থাকত। আয়শার স্বামী মারা গেছেন।

একই কলোনির বাসিন্দা চটের বস্তার দোকানের কর্মচারি সামশু মিয়ার স্ত্রী হাসিনা আক্তারও (৩৭) মারা গেছেন। এছাড়া উদ্ধার হওয়া ৮ মরদেহের মধ্যে আরেকজনের পরিচয় মেলেনি। অজ্ঞাত মরদেহ নিহত আয়শা আক্তারের নিখোঁজ মেয়ে ঋতুর কি-না সেটা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি প্রনব চৌধুরী।

রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতে এই অগ্নিকাণ্ডে পাঁচটিরও বেশি কলোনিতে বিভক্ত ওই বস্তির প্রায় দুই শতাধিক ঘর এবং দোকানপাট পুড়ে গেছে।

চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, ভোররাত ৩টা ৩২ মিনিটের দিকে তারা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পান। ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিটের ১০টি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে ভোর সোয়া ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মাত্র ৪৫ মিনিটের আগুনে দুই শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। মারা গেছে ৮ জন।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম এসেছে। আমাদের টিমও এসেছে। আমরা প্রথমেই রাস্তায় বেস্টনি দিয়ে সাধারণ লোকজনের প্রবেশ বন্ধ করে দিই। এতে আগুন নেভাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি ফায়ার সার্ভিসকে। বস্তি সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি মার্কেট, দোকানপাট ও পোশাক কারখানা আছে। দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আশায় সেগুলো রক্ষা পেয়েছে।

এদিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন ও আহতদের খোঁজখবর নেন।

জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও আমরা জানি না। এটা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট কিংবা রান্নার চুলা থেকে হতে পারে। অথবা অন্য কোন উৎস থেকেও হতে পারে। আমরা এটা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি করেছি। তারা তদন্ত করে দেখবে।

এছাড়া নিহতদের প্রত্যেকের দাফনসহ আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ

বিজ্ঞাপন

‘চিঠি দিও’
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৩২

খুলনায় যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:২৫

আরো

সম্পর্কিত খবর