মারধর নয়, বকাঝকা করেছি: মেয়র নাছির
২ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৫৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীকে মারধর করেননি বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, সিটি করপোরেশনের কাজে বাধা দেওয়ায় ওই প্রকৌশলীকে তিনি বকাঝকা করেছেন।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে নগর ভবনে নিজ কার্যালয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপে আগের দিনের ‘অপ্রীতিকর ঘটনার’ এভাবে ব্যাখা দিয়েছেন মেয়র।
নগরীর হালিশহরে পোর্ট কানেকটিং সড়কে ড্রেন সংস্কারের জন্য গৃহায়ণের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে কথা বলতে সোমবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মেয়রের কাছে যান ওই সংস্থার ছয়জনের একটি টিম। সেখানে আলাপের একপর্যায়ে মেয়র ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান পলাশকে থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসময় সেখানে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়েরও ওই প্রকৌশলীকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শামসুল আলম রাতেই সংস্থার চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ নিয়ে সারাবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দুপুরে সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হন।
আরও পড়ুন: গৃহায়ণের প্রকৌশলীকে মেয়র নাছিরের ‘থাপ্পড়’
এ সময় মারধরের অভিযোগের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কাজে বাধা দিয়েছে তারা। আমি ঘটনা জানতাম না। এলাকাবাসী আমাকে এসে জানায়, সেখানে নালা সোজা করা যাচ্ছে না গৃহায়ণের লোকজনের বাধার কারণে। তাকে বকাঝকা করেছি। মারধরের প্রশ্নই আসে না। অপরাধ আড়াল করার জন্য সে এখন নানা কথা বলছে। কাজে বাধা দেয়ার এখতিয়ার তো তাদের নেই।’
‘যেখানে নালা হচ্ছে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে গৃহায়ণের লোকজন ঝুপড়ি দোকান করে বাজার হিসেবে ভাড়া দিয়েছে। সেটা ওভাবেই ছিল। আমরা কয়েকবার উচ্ছেদ করেছি। যখন বাজার ছিল তখন তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটা বলার পর তিনি (প্রকৌশলী) বলেন, সিটি করপোরেশনের জায়গা হকাররা দখল করে আছে। এটা তো তার বিষয় না। সে বেয়াদবি করেছে। বেয়াদবি করার দুঃসাহস তাকে কে দিয়েছে। এটা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। আমার নিজের কিছু তো না।’
মেয়র তথ্য দেন, সংশ্লিষ্ট স্থানে বাজার বসানোর অনুমতি দিতে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেল থেকে তাদের চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান বাজার বসানোর অনুমতি দেননি।
মেয়র গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনেরও অভিযোগ এনেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গৃহায়ণের যে জমি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি, সেটি মূলত সড়ক ও জনপথ বিভাগের।
মেয়র বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক নির্মাণের জন্য গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে জমি বুঝিয়ে দেয়। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আমাদের দেয়। কিন্তু পুরো জমি যে সড়কের জন্য সেটা গোপন করে তারা ১২০ ফুট জমি আমাদের দিয়েছিল। এরপর ২০১০ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেসময়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গৃহায়ণের চেয়ারম্যান বরাবরে রাস্তার পাশে কাঁচা বাজার বসানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। তবে অনুমোদন পায়নি।’
মেয়র বলেন, ‘সড়কের পাশে ঝুপড়ি আকারে একটি কাঁচাবাজার ছিল। সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে সেটা একবার এবং এরপর আরো ৩-৪ বার উচ্ছেদ করা হয়। বর্তমানে পোর্ট কানেকটিং সড়ক সম্প্রসারণ হচ্ছে এবং সড়কের পাশের অংশে ড্রেন করা হচ্ছে। পুরো সড়কে ড্রেনের কাজ শেষ। শুধু ওই অংশে ছাড়া। সেখানে গৃহায়ণের লোকরা বাধা দিচ্ছে। এটা আমি জানতাম না। গতকাল এলাকাবাসী কমিটি করে আমার কাছে এসে বিষয়টি জানায়।’
এরপর সিটি মেয়র ওই এলাকার সড়কের একটি মানচিত্র সংবাদকর্মীদের দেখান।
মেয়র বলেন, ‘গৃহায়ণের লোকজন আবাসিক এলাকা দিয়ে ঘুরিয়ে ড্রেন করার কথা বলছিল। ড্রেন সোজা না হলে পানি ফুলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা হবে। ফোনে এ বিষয়ে কথা হলে তাদের আমি সন্ধ্যায় অফিসে আসতে বলি। অডিটোরিয়ামে আমাদের এস্টেট শাখার একজন বলেন, উনারা (গৃহায়ণ) ড্রেন ঘুরিয়ে দিতে চান। তখন পেছন থেকে একজন (আশ্রাফুজ্জামান) বলে ওঠেন, আপনি আপনার মত বললে হবে না কি? আমরা ১২০ ফুটই হস্তান্তর করেছি।’
মেয়র নাছির জানান, আশ্রাফুজ্জামানের একথা শোনার পর তিনি কথা বলার জন্য এগিয়ে আসেন।
‘আমি বললাম- এতদিন তো সেখানে বাজার ছিল। কোনো ব্যবস্থা নেননি কেন। ওই রাস্তায় শত শত ট্রাক চলে সেখানে ঝুঁকির মধ্যে বাজার হয় কিভাবে? “তখন উত্তরে সে বলে- সিটি করপোরেশনের জায়গা হকারদের দখলে আছে না ! এটা তো তার বিষয় না। সে বেয়াদবি করেছে। বেয়াদবি করার দুঃসাহস তাকে কে দিল? বাজার বসিয়ে সেখান থেকে তারা নিয়মিত আয় করত। তাই জনগণের স্বার্থ তাদের কাছে কোনো বিষয় না।’
মারধরের অভিযোগের বিষয়ে মেয়র আরও বলেন, ‘অপরাধ আড়াল করার জন্য সে এখন নানা কথা বলছে। তাদের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকার পরও সে কেন এগিয়ে এসে কথা বলেছে?’
আশ্রাফুজ্জামানের বাড়ি গোপালগঞ্জ বলায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘তার বাড়ি গোপালগঞ্জ নয়, মাদারীপুর। সেটাকে সে গোপালগঞ্জ বলে। আমি জানতাম না, সকালে একজন বললো। তার বিরুদ্ধে অনেকে টেলিফোনে অনেক অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে যেখানে জানানো প্রয়োজন জানানো হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ