‘সুফিবাদ নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ ইতিহাসের অমূল্য দলিল’
১০ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাব উদ্দিন নীপু’র অনুবাদ গ্রন্থ ‘চট্টগ্রামের সুফি সাধক ও দরগাহ, সুফিবাদ চর্চার হাজার বছর’ নিয়ে পাঠ আলোচনা হয়েছে। এতে বক্তারা বলেছেন, এ বই সুফি-দরবেশদের মানবতা ও অসাম্প্রদায়িকতার চর্চার বার্তাকে সমাজে তুলে ধরবে। উপমহাদেশ তথা চট্টগ্রামে সুফিবাদের যে ঐতিহ্য, এই বই পড়লে তা জানা যাবে।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এ পাঠ আলোচনার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যোগাযোগ চিন্তন কেন্দ্র’ নামে একটি সংগঠন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক ড.শিহাবুল হুদা পিএইচ ডি অভিসন্দর্ভ হিসেবে ফার্সি, উর্দু, আরবি ও ইংরেজি ভাষায় এ বই লিখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত বইটিকে বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে সর্বসাধারণের পাঠযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নীপু।
পাঠ আলোচনায় চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এই চট্টগ্রাম বারো আউলিয়ার পূণ্যভূমি। এটা নিয়ে চট্টগ্রামবাসী হিসেবে একধরনের ইতিবাচক অহংবোধ আমাদের মধ্যে আছে। এ জনপদে সুফিবাদের প্রচার ও প্রসার হয়েছে আউলিয়াদের মাধ্যমে। কিন্তু স্পষ্ট ধারণার অভাবে সুফিবাদ নিয়ে সমাজে অনেক বিভ্রান্তি আছে। এই বই সুফিবাদ নিয়ে সেসব বিভ্রান্তি দূর করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
মেয়র বলেন, ‘ইসলাম শান্তি, সাম্য ও মানবতার ধর্ম। অথচ বিশ্বের দেশে দেশে ইসলামের নাম বলে অকাতরে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। অনেকে নিজেরাও আত্মঘাতী হচ্ছেন। ধর্মের নামে ভেদাভেদ, বিভাজন করা হচ্ছে। জন্ম দিচ্ছে সহিংসতার। ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান নেই বলেই এ অনাচার হচ্ছে। সুফিবাদ নিয়ে লেখা বইয়ের মাধ্যমে ধর্মের প্রকৃত ধারণা পাওয়া যাবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেকান্দার চৌধুরী বলেন, ‘একজন সংবাদকর্মীর সাফল্য হচ্ছে তার সংবাদটাকে আকর্ষণীয় করে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা। নীপু সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষক হিসেবে এই গ্রন্থে সেই কাজটা সুনিপুণভাবে করেছেন। লেখাটাকে তিনি আকর্ষণীয়ভাবেই উপস্থাপন করেছেন। শিহাবুল হুদা সাহেব অকালে চলে গেছেন। কিন্তু রেখে গেছেন তার মহৎ কীর্তি। সেই কীর্তিকে পাঠকের সামনে এনে নীপুও মহৎ কাজ করেছেন। তবে এই গ্রন্থের একটা দুর্বলতা হচ্ছে- সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণের কথা বলা হয়েছে সুফিবাদের বিভিন্ন বিষয়ে। কিন্তু ইতিহাসে কোনোকিছুই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় না।’
দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক কবি রাশেদ রউফ বলেন, ‘সুফিবাদের সম্পর্ক শুধু ইসলামের সঙ্গে আছে এমন নয়। সুফিবাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানুষে-মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সুন্দরের আরাধনা। রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতায় আমরা সুন্দরের আরাধনা দেখি। তিনি সেটা সংগ্রহ করেছেন আধ্যাত্মিক সাধক লালনের কাছ থেকে। এভাবেই সুফিবাদ ধর্ম নির্বিশেষে যুগে যুগে সমাজে চর্চা হয়েছে। সুফিবাদ নিয়ে লেখা এই অনুবাদ গ্রন্থ ইতিহাসের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।’
দৈনিক প্রথম আলোর উপ-বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার বলেন, ‘ড.শিহাবুল হুদা যে গ্রন্থ রচনা করে গেছেন সেটি একটি অমূল্য সম্পদ। সিন্দুকের ভেতর থেকে নীপু সেটি বের করে এনে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। চট্টগ্রামের এ অমূল্য ঐতিহ্যটা চট্টগ্রামের মানুষ আবারও জানতে পারবে।’
অনুবাদক শাহাব উদ্দিন নীপু বলেন, ‘এই বই অনুবাদ করাটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ সুফিবাদের বিষয়ে লিখতে গেলে বা অনুবাদ করতে গেলে, আগে তো সেটা সম্পর্কে জানতে হবে। আমি প্রথমে সুফিবাদ নিয়ে পড়েছি, তারপর অনুবাদ করেছি বা লিখেছি। সুফিবাদ যে শুধু একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নয়, সেটা ভালোভাবেই উঠে এসেছে মূল লেখকের লেখায়। আমি অনুবাদের ক্ষেত্রে কতটুকু সেটা ধরে রাখতে পেরেছি, তার বিচারের ভার পাঠকদের হাতে দিলাম।’
পাঠ আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দেশে আধুনিক ই-লার্নিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. বদরুল হুদা খান।
আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেম, ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শহীদুল হক এবং সহকারী অধ্যাপক রাজীব নন্দী।
সারাবাংলা/আরডি/একে