‘আমাদের লাখ লাখ স্কুল, মনিটরিং করা খুব কঠিন’
২০ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৫১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় ‘বিতর্কিত’ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন প্রসঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘এরকম ভুল আর হবে না, সেটা বলছি না। চেষ্টা করছি যেন এরকম ভুল কেউ না করে। এটি স্কুল পর্যায়ের প্রশ্নপত্র। আমাদের লাখ লাখ স্কুল, মনিটরিং করা খুব কঠিন।’
শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামে ‘শিক্ষায় চট্টগ্রাম : একগুচ্ছ প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের উপমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা খ্যাত দৈনিক আজাদী এই আলোচনার আয়োজন করে।
মেসেঞ্জার-ইনবক্সে খবর জানাবে সারাবাংলা News BOT
নওফেল বলেন, ‘যে শিক্ষক এই প্রশ্ন করেছেন তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। এটা মানবিক ভুল। পত্রিকায় সবসময় যাদের নাম দেখা যায় তা ব্যবহার করেছেন প্রশ্নে। উপলব্ধি করতে না পেরে মানবিক ভুল করেছেন। আপাতত মনে হচ্ছে, এর পেছনে কিছু নেই। উনার ব্যাখ্যাটা পরিপূর্ণ। তারপরও খতিয়ে দেখা হবে। ভুলের পেছনে কোনো কারণ আছে কি-না তা দেখা হবে।’
বিতর্কিত বিষয়ে গণমাধ্যমে অতিরিক্ত আলোচনার বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিসভার এ সদস্য বলেন, ‘গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ, আপত্তিকর বিষয় ও ব্যক্তি নিয়ে যেন কম আলোচনা করা হয়।’
বুধবার (১৭ এপ্রিল) বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় ভুল-বিভ্রান্তিতে ভরা ও অসংলগ্ন প্রশ্নপত্র করে সমালোচনার মুখে পড়ে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নে দেখা যায়, নবম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের বহু নির্বাচনি প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম কী?’ এ প্রশ্নের সম্ভাব্য যে চারটি উত্তর দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পর্ন তারকা মিয়া খালিফার নাম! তবে তার নাম লেখা হয়েছে ‘মিয়া কালিফা’।
শুধু তাই নয়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কিশোর উপন্যাস ‘আম-আঁটির-ভেঁপু’র (প্রশ্নে আঁটি বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই) রচয়িতার সম্ভাব্য নাম হিসেবে রাখা রয়েছে সাবেক পর্ন তারকা অভিনেত্রী সানি লিয়নের নাম!
গোলটেবিল আলোচনায় শিক্ষার মান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন নওফেল। তার দাবি- দেশে শিক্ষার মানের বিষয়ে যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা সঠিক নয়।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার মান নিয়ে জনপ্রত্যাশা বেশি। এর অর্থ এই নয় যে, শিক্ষার মান খারাপ। যদি মান খারাপ হতো, তাহলে তো মানবসম্পদ সৃষ্টি হতো না। দেশে মানবসম্পদ ভালোই সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে জিডিপি বাড়ছে।’
নওফেল আরও বলেন, ‘শিক্ষার মান অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির ওপর। তারা হলো আমাদের সফটওয়্যার। আমাদের হার্ডওয়ারে মানে শিক্ষার অবকাঠামো খাতে বেশ উন্নয়ন হয়েছে। সফটওয়্যারেও উন্নতি ঘটাতে হবে। আমরা শিগগিরই এমপিও দিতে যাচ্ছি। শিক্ষায় প্রচুর বরাদ্দ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন প্রতি উপজেলায় যেন একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল করা হয়।
‘ঠুনকো প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। অনেকে মনে করেন রাজনীতিবিদরা শুধু ভাষণ-স্লোগান দেন। এটি ঠিক নয়। যে প্রতিশ্রুতি দেব সেটি বাস্তবায়ন করতে চাই। সব করে দেব এটা বলতে চাই না’ বলেন নওফেল।
আলোচনায় বক্তারা স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি নিয়ে নানা আপত্তি তোলেন। অধিকাংশ বক্তা ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।
এর জবাবে শিক্ষা উপমন্ত্রী ম্যানেজমেন্ট কমিটি নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক বাস্তবতার বাইরে নই। এ খাতের সব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের বাবা মিয়া খালিফা!
দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে এবং স্টাফ রিপোর্টার রতন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক।
দৈনিক আজাদী ভবনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মাউশি’র উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী।
এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দিন এবং নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকেরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে