চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশ হেফাজতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হামলা চালিয়ে ছিনতাই মামলার এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে ওই আসামিসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে চমেক হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে এ হামলা ও আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে বলে নগরীর পাঁচলাইশ থানা পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, হামলার সময় ওই আসামিকে পাহারায় থাকা দেলোয়ার হোসেন নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়। তিনি চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
হামলা চালিয়ে পুলিশ হেফাজত থেকে নিয়ে যাওয়া ওই আসামির নাম মো. ইমাম হোসেন আকাশ (২৫)। তার বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। তবে স্ত্রী, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর বন্দর থানার বন্দর অফিসার্স কলোনি গেটের সামনে ছিনতাই করতে গিয়ে চীনের এক নাগরিককে ছুরিকাঘাতের পর স্থানীয় লোকজন দুজনকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এদের একজন আকাশ এবং আরেকজন শাহজাদ হোসেন (২৫)। গণপিটুনিতে আহত দুজনকে পুলিশ প্রথমে বন্দর হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে চমেক হাসপাতালে নেয়। শাহজাদকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর পুলিশ বন্দর থানায় নিয়ে যায়। আকাশের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে পুলিশ পাহারায় চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন এএসআই এবং দুজন কনস্টেবলের পাহারায় আকাশ চিকিৎসাধীন ছিল। রাত ৮টার দিকে তার ছোট ভাই ও স্ত্রীসহ প্রায় ১০ জন বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঢোকে। তারা কনস্টেবল দেলোয়ারকে ছুরিকাঘাত করে চিকিৎসাধীন আকাশকে নিয়ে দ্রুত নেমে যায়। তিন পুলিশ সদস্যই নিরস্ত্র ছিলেন। তারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও হামলাকারীরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।’
পুলিশকে আহত করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান শুরু করে। বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত মোট সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার সাতজন হলেন— ছিনিয়ে নেওয়া আসামি মো. ইমাম হোসেন আকাশ (২৫), তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২৪), ভাই মোহাম্মদ হোসেন (১৯) এবং হামলায় অংশ নেওয়া আছমা (২৮), মো. মুন্না (২২), সুমাইয়া আক্তার (২৪) ও রাব্বি (১৯)।
ওসি সোলাইমান জানান, গভীর রাতে চমেক হাসপাতাল এলাকা থেকে আছমা, মুন্না ও সুমাইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী বেড়িবাঁধে অভিযান চালিয়ে আকাশের ছোট ভাই মোহাম্মদ হোসেন ও রাব্বিকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার সকালে সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট কুমিরা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অস্থায়ী চেকপোস্টে বাসে তল্লাশি করে আকাশ ও তার স্ত্রী সোনিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
“আকাশ তার স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরী ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে যাচ্ছিল। আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একে খান মোড়, সিটি গেইট থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত মহাসড়কে নজরদারি শুরু করি। সকালে ছোট কুমিরায় চেকপোস্টে একটি বাসে তল্লাশির সময় তাদের পাওয়া যায়। আকাশ, তার ভাই মোহাম্মদ হোসেন ও রাব্বি পেশাদার ছিনতাইকারী। আকাশের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ১২টি, হোসেনের বিরুদ্ধে ৬টি এবং রাব্বির বিরুদ্ধে ৪টি মামলার তথ্য পেয়েছি,” বলেন ওসি।
পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেফতার সাতজনকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আদালতে পাঠানো হবে বলে ওসি জানিয়েছেন।
এদিকে চীনা নাগরিককে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশের করা ওই মামলায় গ্রেফতার আকাশ ও শাহজাদসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
নগর পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহমুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার শিকার চীনের নাগরিকের পরিচয় আমরা পেয়েছি। তার নাম লি সিয়াও ফোং। তিনি মূলত চীনের বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদারদের মালামাল সরবরাহের ব্যবসা করেন। বাংলাদেশে আসার পর গত তিন মাস ধরে ঢাকার মতিঝিলে থাকেন। ব্যবসায়িক কাজে মঙ্গলবার সকালে একজন দোভাষীসহ চট্টগ্রামে আসেন। প্রথমে তারা মুরাদপুরে গিয়ে কিছু ব্যবসায়িক কাজকর্ম করেন।’
‘এরপর তারা বন্দর এলাকায় আসেন। তবে বন্দরে কেন এসেছেন, সেটা আমরা জানতে পারিনি। বন্দর এলাকায় আসার পর তিনি তার দোভাষীকে হারিয়ে ফেলেন। তাকে খোঁজার সময়ই মূলত তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন,’ যোগ করেন এসি মাহমুদুর রহমান।