ঢাকা: দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদ এলাকায় ভবন ভাড়া নিয়ে তৈরি করা একটি মাদরাসা থেকে ৪০০ লিটারের মতো তরল রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরের আগে ওই মাদরাসার একটি কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনের দেওয়াল দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে। এ ঘটনায় তিন নারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন ডেকে কথা বলেন ওসি সাইফুল ইসলাম। সেখানে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ওসি বলেন, ‘হাসনাবাদ উম্মুল কোরআন মাদ্রাসাটিতে ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠি হয়। সেখানে ৩৫ জনের মত শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতো। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় শিক্ষার্থীদের কেউ ছিল না। তবে পাশের একটি কক্ষে মাদ্রাসার পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২) তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন। বিস্ফোরণে তারা সবাই আহত হয়েছেন। আহত হয়ে প্রথমে তারা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, এর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে শেখ আল আমিন আত্মগোপনে চলে যান।’
ওসি বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের পাশাপাশি এন্টি টেররিজম ইউনিট, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডির ক্রাইম সিন যুক্ত হয়। তদন্তর এক পর্যায়ে আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগমকে (২৮) পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। আহত দুই সন্তান উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহকে (৭) অন্য একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ছয় মাসের আরেক সন্তান তার মায়ের সাথে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।’
আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগমের তথ্যের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘আছিয়া খাতুনসহ মোট তিন নারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্য দুই নারী হলেন আছিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমীন আক্তার ও আসমানী খাতুন নামে আরেক নারী। আছিয়া জানিয়েছেন, আল আমিন এর আগে ডিএমপির স্পেশালাইজড টিমের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি জেলে ছিলেন। এরপর ২০২৩ সালে জামিনে বেরিয়ে প্রথমে অটোরিকশা চালাতেন এরপর মাদরাসায় আত্মনিয়োগ করেন। তবে ২০২২ সাল খেকে মাদরাসাটি তার দুলাভাই মুফতি হারুন নামে একজন পরিচালনা করতেন। তিনি এখন বিদেশে আছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘কয়েক ড্রাম (৪০০ লিটার) হাইড্রোজেন পার অক্সাইড নামে তরল রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়া গেছে। সেগুলো জব্দ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় একটি মামলা হচ্ছে। মামলায় উদ্ধার হওয়া রাসায়নিক, তিনটি ককটেল সদৃশ্য বস্তু জব্দ হিসেবে দেখানো হবে এবং আটকদের গ্রেফতার দেখানো হবে।’
বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে কি না? জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে কি না এখনই নিশ্চিত না। তবে পুলিশের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে বিস্ফোরিত হয়েছে। আর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হলেও এখনো কোনো মন্তব্য আসেনি।’
আল আমিন কোনো জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন কি না? জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এর আগে দুইবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। কয়েকটি থানায় মামলা আছে বলে জানা গেছে। তবে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কিনা তা জানা যায়নি।’
এর পেছনে আর কেউ জড়িত আছে কি না? জানতে চাইলে ওসি আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই কেউ না কেউ জড়িত আছে। মালামাল কোথা থেকে এসেছে? বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি (কম্পিউটারের সিপিইউ ও মনিটর) কে দিয়েছে? কেউ না কেউ তো রয়েছেই। তবে তদন্ত চলছে সব বেরিয়ে আসবে।’
কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানার ওসি সকলকে সতর্ক করে বলেন, ‘যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটি অত্যান্ত একটি জনাকীর্ণ এলাকা। গত তিন বছরে কেউ টের পেল না। সেখানে কি হচ্ছে কেউ জানল না। শুক্রবার না হলে হয়তো অনেকেই হতাহত হতো। তাই যাদের আশেপাশে এরকম স্থাপনা রয়েছে, যাদের গতিবিধি সন্দেহ হয়, তাদের ওঠাবসায় খারাপ কিছু মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ জানানোর পরামর্শ দেন। আর আল আমিনকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’