ঢাকা: ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি শুটার ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খান ভারতে পালিয়ে গেছে।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ফয়সাল প্রথমে ঢাকা থেকে সিএনজিতে করে আমিনবাজারে যায়। সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুরে ও পরে প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছায়। সেখানে ফিলিপ নামে একজন তাদেরকে সীমান্ত পার করে পুত্তির নামে একজনের কাছে হস্তান্তর করে। তারপর তিনি ট্যাক্সি ড্রাইভার সামি নামে একজনের কাছে দেওয়া হয়। শামী তাদেরকে ভারতের মেঘালয়ের তুরা নামক শহরে পৌঁছে দেয়। ইনফরমাল চ্যানেলে আমরা মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, সেখানে তারা পুত্তির ও শামীকে গ্রেফতার করেছে।’
কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে ফয়সাল ভারতে পালিয়ে গেছে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আমাদের তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি সে ভারতে আছে। আমরা আগে সত্যতা পাইনি তাই জানাতে পারিনি। বন্দী বিনিময় চুক্তিতে আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ওখানেরও পুলিশ ফয়সালের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওসমান হাদি হত্যায় এখন পর্যন্ত ফয়সালের বাবা-মা, তার স্ত্রী, শ্যালক, বান্ধবীসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয় জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে সক্ষম হব। তাদের থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ৫৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার চেকও উদ্ধার করা হয়।’
চেক বই কিভাবে কাদের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফয়সালের তিনটি আইটি ফার্মের নামে চেকগুলো করা। কিছু চেকে অ্যামাউন্ট বসানো ছিল। সেই ফিগারটাই হলো ২১৮ কোটি টাকা।’
এর আগে, তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ওসমান হাদি মতিঝিল এলাকায় নির্বাচনি প্রচার শেষ করে ফেরার পথে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে মোটরসাইকেল আরোহী ফয়সাল তার মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের গত ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্তাধীন রয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও মুল অভিযুক্তকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।