৫ প্রতিষ্ঠান আনত ক্যাসিনো সরঞ্জাম, তথ্য পেয়েছে এনবিআর
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৫২ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:৩৩
ঢাকা: শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি করেছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। সংস্থাটির শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর বলছে, জুতার সরঞ্জাম, কম্পিউটার, মোবাইল যন্ত্রাংশ বা আসবাবপত্র আমদানির নাম করে এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসত ক্যাসিনো সরঞ্জাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতির সুযোগ নিয়েও কখনো কখনো সরাসারি আমদানি করা হয়েছে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম। চীন থেকে এগুলো আমদানির সময় অর্থ পাচারও করা হতো।
এনবিআর এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানিতে এনবিআর যে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে সেগুলো হলো— এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স, নিনাদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ, এথ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও একটি পেপার মিল। এনবিআর ধারণা করছে, এর বাইরেও আরও অনেক প্রতিষ্ঠানই ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি করেছে।
আরও পড়ুন- ওমানের মাসকট ব্যাংক হয়ে জার্মানি যেত ঢাকার ক্যাসিনোর টাকা
শুল্ক গোয়েন্দারা বলছেন, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি করা হয় মূলত চীন থেকে। এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেম টেবিল, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল। এর বাইরেও রয়েছে ক্যাসিনো চিপস, রেসিং কার্ডসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। এসব মেশিনের দাম একলাখ টাকা থেকে শুরু করে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত। এনবিআর বলছে, ক্যাসিনোতে জুয়ায় টাকা লগ্নিকারী ব্যক্তিদের আয়কর ফাইলও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বরে এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স জুতার সরঞ্জাম ও মোবাইল যন্ত্রপাতির ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনো চিপস ও রেসিং কার্ড আমদানি করেছে। ২০১৮ সালের মে মাসে নিনাদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার মাদারবোর্ড আমদানির ঘোষণা দিয়ে এবং এথ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭ সালের আগস্টে জন্মদিনের সরঞ্জাম আনার নাম করে দেশে নিয়ে আসে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেম, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল।
আরও পড়ুন- খালেদের ক্যাসিনোতে প্রতি রাতে লেনদেন হতো কোটি টাকা!
এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের নথি ঘেঁটে প্রাথমিকভাবে এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানির তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এদের মধ্যে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে খেলার সামগ্রীর এইচএস কোড ব্যবহার করে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি করেছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের কাছে যেসব ডাটাবেজ আছে, আমরা সেখান থেকে এই তথ্য পেয়েছি। তবে অনুসন্ধানে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
আরও পড়ুন- ক্যাসিনো থেকে প্রতি রাতে ৪০ লাখ ‘আয়’ সম্রাটের
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। ২০০৯ সাল থেকে যত আমদানি হয়েছে, সবগুলো তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্যাসিনো ব্যয় বহুল একটি খেলা। এখানে কী কী সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ ফাঁকি হয়েছে। আমরা পণ্য আমদানি নীতির অপব্যবহার কিংবা মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছি।
তিনি আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এনবিআর। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হবে— এমন সুযোগ যেখানেই আছে, সেখানে কোনো নমনীয়তা এনবিআর দেখাবে না। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এনবিআর সোচ্চার রয়েছে। তাই দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন- মতিঝিলে ৪টি ক্যাসিনোতে অভিযান, এতদিন জানতো না পুলিশ
এর আগে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানের নিজ বাসা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। ওই দিন বিকেলেই ফকিরাপুলে তার ইয়ং মেনস ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। তিন দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর নিকেতনে নিজের অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয় আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে। যুবলীগের এই দুই নেতাকে গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে এনবিআর।
এরই মধ্যে রিমান্ডে থাকা জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ ১২ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
এনবিআর ক্যাসিনো ক্যাসিনো সরঞ্জাম ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর