ক্যাসিনোকাণ্ড: ২৪ জনের ১৫০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পেয়েছে দুদক
২৯ অক্টোবর ২০২০ ২২:১৪
ঢাকা: ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম এসেছিল এমন ২৪ ব্যক্তির দেড় হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে তাদের প্রায় ৬৫৫ কোটি কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করে সংস্থাটি। আর এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তও প্রায় শেষপর্যায়ে। আর খুব দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। আর সেই অভিযানে গ্রেফতার হয় ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া, ঠিকাদার জি কে শামীমসহ ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। আর এমন ২৪ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর প্রায় একবছর ধরে চলা এ সব মামলার তদন্ত প্রায় শেষপর্যায়ে।
এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, ক্যাসিনো ঘটনায় দুদকের দায়ের করা ২২ মামলায় আসামি ২৪ জন। আর এ সব মামলায় অবৈধ সম্পদ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। আর আদালতের অনুমতি নিয়ে দুদক জব্দ করেছে সাড়ে ৬শ কোটি টাকার সম্পদ।
এদিকে দুদকের তদন্তে জি কে শামীমের ১৯টি ব্যাংক হিসাবে পাওয়া গেছে ৩২৪ কোটি টাকা। আর স্থাবর সম্পদ ৪১ কোটি টাকার। যার কোনো বৈধ উৎস নেই। এ সব সম্পদ জব্দ করেছে দুদক। আর যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের দেশের ২টি ব্যাংক হিসাবে ৮৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকার অবৈধ অর্থ পেয়ে দুদক সেটাও জব্দ করেছে। তবে দেশে খুব বেশি সম্পদের তথ্য না পেলেও সম্রাটের সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ২২৭ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে দুদক।
যুবলীগের বহিষ্কৃত আরেক নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার দেশের ছয়টি ব্যাংকের ১৭টি হিসাবে দুদক ৩১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা পায়। যা এখন জব্দ অবস্থায় আছে। এ ছাড়া রাজধানীতে ৩ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাটও পেয়েছে দুদক। দুদকের তদন্তে যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া ক্যাসিনো সম্পৃক্ততায় নাম আসা এনামুল হক আরমান, সেলিম প্রধান, লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, রূপন ভুঁইয়া, এনামুল হক এনু, কাজী আনিসুর রহমান, শফিকুল আলম ফিরোজ, মমিনুল হক সাঈদসহ ২১ জনের নামে ৯শ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর চলতি মাসেই তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে ক্যাসিনো ঘটনায় দুদক মামলা করে ঠিকাদার জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তার, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রূপন ভূইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান (পাগলা মিজান), কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী, কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, ব্যবসায়ী মো. সাহেদুল হক, এনআর গ্লোবালের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, গণপূর্তের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী মোছা. জেসমীন পারভীন এবং গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৈাশলী উৎপল কুমার দে ও তার স্ত্রী গোপা দে।
এ বিষয়ে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মামলার তদন্ত করেছি। খুব দ্রুতই চার্জশিট দেওয়া হবে। আর সেই অনুযায়ী বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কোনোভাবেই এই অবৈধ সম্পদ তাদের ভোগ করতে দেওয়া হবে না।’
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় ‘গরিবের ক্যাসিনো’, প্রতিরাতে লেনদেন ১০-১৫ লাখ টাকা
ক্যাসিনোকাণ্ডের একবছর, র্যাবের নজরদারিতে নিয়ন্ত্রণে ক্লাব পাড়া
ক্যাসিনোকাণ্ড: বদলি ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের আর কোনো শাস্তি হয়নি