প্যানেল নিয়ে মহাচিন্তায় ছাত্রদল, নির্ভার ছাত্রলীগ
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:১৬
।। কবির কানন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাবি: আসন্ন ডাকসু নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচনে (১১ মার্চ) প্যানেল ঠিক করতে গিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অন্যদিকে বিপরীত অবস্থা ছাত্রলীগসহ বামসংগঠন ও কোটা আন্দোলনকারীদের।
আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে ছাত্রলীগ, বাম ছাত্র সংগঠনগুলো জোটবদ্ধ হয়ে প্যানেল দেওয়ার কথা ভাবছে। ছাত্রদলের জোটের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যাচ্ছে না। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা স্বতন্ত্র প্যানেল দিবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য আগামী ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। এটা সামনে রেখে ছাত্রসংগঠনগুলো প্যানেল ঠিক করতে আলোচনা, পর্যালোচনা শুরু করেছে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে ছাত্রলীগসহ অন্যারা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মহাবিপাকে রয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। এই সময়ের মধ্যেই ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের প্রার্থী ঠিক করতে হবে।
ডাকসুর তফসিল অনুযায়ী, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতায় রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে চলমান যেকোনো ডিসিপ্লিনারিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় থাকা এবং বয়স সর্বোচ্চ ৩০ থাকা। এই যোগ্যতায় ছাত্রলীগ, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রার্থী পেতে খুব বেগ পেতে না হলেও ছাত্রদলের গলদঘর্ম অবস্থা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও এই যোগ্যতায় প্রার্থী হতে পারছেন না। ছাত্রদলের অনেক নেতার বয়স ৩০ এর মধ্যে আছে তবে তাদের চলতি ছাত্রত্ব নেই। অনেকের ছাত্রত্ব আছে কিন্তু তাদের বড় ভাইয়েরা ডাকসুতে অংশ নিতে চায় না। এক্ষেত্রে ডাকসু ও হল সংসদের প্যানেলে প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে বেশ সংকটে আছে ছাত্রদল।
দীর্ঘ ১০ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোণঠাসা ছাত্রদলের হলগুলোতে ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মীই নেই। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি হয়। আর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আল মেহেদী তালুকদারকে সভাপতি ও আবুল বাশার সিদ্দীকি সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিট গঠন করা হয়। কিন্তু শীর্ষ এই চার নেতার কারওই ডাকসু নির্বাচন করার বয়স নেই।
তবে বিভিন্ন হল কমিটির ৩৮০ সদস্যের কমিটি আছে। যাদের অনেকের ডাকসু নির্বাচন করার বয়স রয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সারবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ডাকসুর প্রার্থী নিয়ে কথা বলছি। শেষ পর্যন্ত বিবেচনায় যারা প্রার্থী হতে পারবে আমরা তাদের প্রার্থী করব, কোনো সমস্যা নেই।’
ছাত্রদলের প্রার্থিতা কারা সমন্বয় করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয়, ইউনিভার্সিটির নেতাদের নিয়ে বিএনপি সমন্বয় করবে। আর আমরা কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতারা মিলে হলগুলোর প্যানেল ঠিক করব।’
প্রার্থিতা নিয়ে ছাত্রদলের থেকে ছাত্রলীগ নির্ভার অবস্থায় রয়েছে। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় শীর্ষ চার নেতারই প্রাথী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাকসুর প্যানেল ঠিক করবে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আর হল সংসদগুলোর প্রার্থী ছাত্রলীগের চার নেতা এরইমধ্যে ঠিক করতে কাজ শুরু করেছেন।
ছাত্রলীগের প্যানেলের বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জানি প্যানেল নেত্রী ঠিক করে দেবেন। এরইমধ্যে খোঁজা হচ্ছে কারা ভালো ইমেজধারী খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত, ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে; এ ধরনের প্রার্থী খোজাঁ হচ্ছে। আর ভিপি/জিএস/এজিএস নেত্রী ঠিক করে দিবেন। এটার জন্য হয়ত বিভিন্ন ধরনের সংস্থার মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে যতদূর জানি।’ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনও একই ধরনের কথা বলেন।
বাম ছাত্রসংগঠনগুলো জোটবদ্ধ প্যানেল দেবে
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে। প্রগতিশীল জোটভুক্ত সাতটি বাম ছাত্র সংগঠন ও সম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সমন্বয়ে তারা একটি আলাদা প্যানেল করার চেষ্টা করছে।
আজ রোববার বিকেলে তারা টিএসসি ভিত্তিক সংগঠন, আদীবাসী ছাত্র সংগঠন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে বৈঠক করবেন। প্রগতিশীল জোট নির্বাচনের জন্য ১১ দফা ঠিক করেছেন। এই দাবির সঙ্গে যারা ঐক্যমত হবে তাদের নিয়েই তারা প্যানেল করবেন। প্রগতিশীল জোটের শীর্ষপদে সম্ভাব্যপ্রাথী হবেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক রাজী দাস, ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি সভাপতি সালমান সিদ্দিকী।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদ লিটন নন্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জোট বানানোর চেষ্টা করছি। প্যানেল নিয়ে এখনও ভাবিনি।’
কোটাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা সবার
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ ও প্রগতিশীল জোট। কিছুদিন পূর্বে ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নুরুল হক নুরের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে তাকে এজিএসের পদ অফার করেছেন বলে জানা গেছে। বাম সংগঠনগুলোর কয়েকটি কর্মসূচিতে কোটার নেতারা সংহতি প্রদান করে বক্তব্য দিয়েছেন। বামসংগঠনগুলো কোটার নেতাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে কোটা আন্দোলন প্লাটফর্ম স্বতন্ত্র প্যানেল দেবে বলে শোনা যাচ্ছে।
কিন্তু ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণার পরই কোটার নেতাদের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুইবার হামলা করেছে ছাত্রলীগ। সেক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্রভাবে ডাকসু ও হলগুলোতে প্যানেল দিতে কতটা সক্ষম হবেন সেটা দেখার বিষয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ ছাত্রদের দাবি আদায়ের জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের মাদার অর্গানাইজেশেনের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে। কিন্তু আমাদের সেটা নেই। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের জন্যই কাজ করব। আমরা স্বতন্ত্রভাবে প্যানেল দিব।’ কিন্তু স্বতন্ত্র প্যানেল দিলে তারা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের রোষের শিকার হবেন বলেও আশঙ্কা করেন।
কোন দিকে টিএসসিভিত্তিক সংগঠন?
টিএসসি ভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ২২টি সংগঠন গত বৃহস্পতিবার অ্যাকাডেমিকভবনে ভোটকেন্দ্র সমর্থন দিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সে হিসেবে সবার ধারণা এই ২২টি সংগঠনের নেতাদের কয়েকজনকে ছাত্রলীগের প্যানেলে রাখা হবে। তবে কিছু সংগঠন ছাত্রলীগের প্যানেলে যাওয়ার জন্য অসন্তোষও প্রকাশ করেছে। একটি সংগঠনের শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, তারা আজকে প্রগতিশীল জোটের সঙ্গে বসবেন। তবে তারা মূলত ছাত্রলীগের সঙ্গে প্যানেল দেবেন।
সারাবাংলা/কেকে/এমএইচ