Wednesday 04 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যবসা-বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে বাজেট আশাব্যঞ্জক নয়: ডিসিসিআই সভাপতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২৫ ২০:০১ | আপডেট: ২ জুন ২০২৫ ২১:২০

বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডিসিসিআই এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

ঢাকা: ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নূন্যতম করের সমন্বয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমোদন যোগ্য বিয়োজনের আওতা বৃদ্ধি, করজাল সম্প্রসারণ এবং অটোমেটেড রিটার্ন ব্যবস্থা চালুর মতো ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, সহজে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ উন্নয়ন, সিএমএসএমই এবং ব্যাংকিং খাত সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ততটা সহায়ক নয়।

সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এসব কথা বলেন ডিসিসিআই এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও অর্থ উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান ডিসিসিআই সভাপতি।

জাতীয় বাজেটের তাৎক্ষনিক পর্যালোচনার পর খাত ভিত্তিক বিশ্লেষণ ও অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা যা বিগত অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের তুলনায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। কর খাত থেকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত আয় এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ঘাটতি বাজেট পূরণে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ঋণ এবং ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা দেশের অভ্যন্তরীন খাত নেওয়া হবে। অভ্যন্তরীন খাত থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমান গত বছরের তুলনায় আট হাজার কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।

ঢাকা চেম্বারের অবস্থান জানিয়ে তাসকীন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে বাজেটে আমরা দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করিনি। ঘাটতি বাজেট মেটাতে গত বছরের থেকে বেশি মাত্রায় ব্যাংক নির্ভর হওয়া একটি নেতিবাচক দিক। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাতের উপর নির্ভরতা কমিয়ে করজালের আওতা বাড়িয়ে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বেসরকারি চাকুরীজীবীদের আয়কর হিসাবে বিয়োজনের পরিমাণ ৪.৫০ লক্ষ টাকা হতে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। আয়কর এর জন্য Prospective করের বিধান চালু করা হয়েছে। কিন্তু ৫ শতাংশ স্ল্যাব তুলে দেওয়া এবং শুরুতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার উর্দ্ধে পরবর্তী ৩ লাখ টাকার উপর ১০ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। ব্যক্তি করদাতার গ্রস প্রাপ্তির উপর ০.২৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ টার্নওভার কর নির্ধারন করা হয়েছে।

কিন্তু মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হতাশাজনক। আমরা করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার দাবি করছি। আয়কর হিসাবে বিয়োজনের পরিমাণ বৃদ্ধি করাকে ইতিবাচক মনে করছি। Prospective করের বিধান ইতিবাচক, তবে কর স্ল্যাবে পরিবর্তন মধ্যবিত্ত ও চাকুরিজীবিদের উপর করের বোঝা বাড়বে।

মূল্য সংযোজন করের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স পন্য উৎপাদনে মূসক হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোবাইল ফোন তৈরিতে ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ সব ভ্যাট বাড়ানো স্থানীয় শিল্প ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমরা এই প্রস্তাবকে পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি। শিল্প খাতে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর ৩ শতাংশ আগাম কর কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। ন্যূনতম করের কারণে কোনো করদাতা নিয়মিত করের যে পরিমাণ অতিরিক্ত কর প্রদান করবে তা পরবর্তী করবর্ষসমূহে সমন্বয় করার সুযোগ রাখা হয়েছে। করমুক্ত প্রায় ১৫২টি পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়েছে। আগাম কর কমানোর ফলে ব্যবসায়িদের কার্যকর মূলধন বৃদ্ধি পাবে। ন্যূনতম কর ভবিষ্যতে সমন্বয় করার সুযোগ থাকায় ব্যবসায়িদের খরচ কমবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ২২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ০.৮১ শতাংশ কম। গ্যাস বিতরণে নিযুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার ২ শতাংশ এর স্থলে ০.৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এলএনজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু বিদ্যুতের প্রায় ৬৫ শতাংশ গ্যাস নির্ভর, সেহেতু স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এলএনজির আমদানি পর্যায়ে গ্যাসের উৎসে কর কমানোর ও ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে শিল্প, বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদী কোন সমাধান নয়। আমরা চাই, জ্বালানি খাতের বাজেটে অফ-শোর ও অন-শোর উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি। পক্ষান্তরে বিদ্যুৎ খাতের বাজেট বরাদ্দ কমানোর দাবি করছি।

শিক্ষা খাত নিয়ে অবস্থান তুলে ধরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ৮২ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। গত বছর এ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। শিক্ষা খাতের এই বাজেট বৃদ্ধি, উৎপাদন ও কর্মমূখী শিক্ষা বিস্তারের জন্য সহায়ক হবে। এ বরাদ্দ গবেষণা ও উন্নয়ন আরও বেশি ব্যয় করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, করজাল সম্প্রসারণ এবং অটোমেটেড রিটার্ন ব্যবস্থা চালুর মতো বিষয়গুলো আপতদৃষ্টিতে ইতিবাচক। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভারতের সাথে non-tariff barier এবং আইএমএফ-এর শর্তানুসারে কর অব্যাহতি সীমিতকরণসহ কিছু চ্যালেঞ্জ বাজেট বাস্তবায়নে প্রভাব ফেলতে পারে। একই সাথে, উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি ও বিকল্প অর্থায়ন উৎস তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে ঢাকা চেম্বার মনে করে, একটি স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গঠনে এই বাজেটের কার্যকর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। তবে বিনিয়োগ, Doing Business পরিবেশ উন্নয়ন, CMSME এবং ব্যাংকিং খাত সংস্কার বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। এসব পদক্ষেপ বাজেটে বিবেচনা করা হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ইতিবাচক ধারায় ফিরতো।

সারাবাংলা/এমএইচ/এমপি

২০২৫-২৬ অর্থবছর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই)

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর