ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান (এনবিআর) মো. আবদুর রহমানকে অপসারণের দাবিতে আগামী সোমবার (২৩ জুন) কলমবিরতির ঘোষণা দিয়ছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পাশাপাশি এনবিআর কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনে নবগঠিত কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার (২১ জুন) বিকেলে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে-এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামীকাল রোববার (২২ জুন) বাজেট পাসের কার্যক্রম রয়েছে। এজন্য আগামী সোমবার (২৩ জুন) ঢাকাস্থ সকল দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি এবং অন্যান্য দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ স্ব-স্ব দফতরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করবেন।
সরকার গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে। এর বিরোধিতা করে গত ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতির আন্দোলন করে এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। গত ২৫ মে রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থমন্ত্রণালয় জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে।
এর ফলে ২৬ মে কলমবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এনবিআর। তবে এনবিআর চেয়ারম্যান কে অপসারণ ও চেয়ারম্যান কে অসহযোগিতা করার ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
গত ২০ জুন এনবিআর কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের জন্য ছয় সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার। এনবিআর সদস্য (কর, লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্ট) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীকে এই কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ করে শনিবার (২১ জুন) বিকালে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদ।
এসময় সংগঠনের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকা এতে উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলেন, ইতোমধ্যে সংস্কার কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়নের খড়গ নেমে এসেছে। আবার, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উস্কানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তার মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক কার্যক্রম সময়ক্ষেপণ বৈ কিছু নয় বলে ঐক্য পরিষদ মনে করে।
উল্লেখ্য, পূর্ব থেকেই ঐক্য পরিষদ রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। এনবিআর কর্তৃক গঠিত কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। যে কোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
এনবিআর সংস্কারে গঠিত নতুন কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর ও কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয় জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনাও করা হয়নি।’
এনবিআর উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন জানিয়ে বলা হয়, এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। যে রাজস্ব অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে এতদিন কর্মসূচি চলেছে, তা জারি হওয়ার পর যে বা যারা একে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকায় ও ফেসবুকে বক্তব্য দিয়েছিলেন, এনবিআরের তেমন সদস্যগণকেও গঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এ থেকে এটি স্পষ্ট যে, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারে সরকারের সদিচ্ছাকে এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হচ্ছে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়, কারণ তিনি এটি বাস্তবায়ন হতে দিবেন না। আপনারা সবাই জানেন, পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী যে ৪৪ জন (এর মধ্যে ছয়জনকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে) আমলার তালিকা করা হয়েছে, তার মধ্যে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান তিন নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন। সুতরাং, সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করবেন, এটাই বরং স্বাভাবিক।