উপকূলীয় নারীদের সুপেয় পানি ও জীবিকায় সহায়তা দেবে সরকার
২৩ জুলাই ২০১৯ ০৮:১৬
ঢাকা: উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সুপেয় পানি ও টেকসই জীবিকার অভাব। এই সমস্যাগুলো নিয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। তাই সরকার জলবায়ুর পরিবর্তনে সৃষ্ট লবণাক্ততা মোকাবিলা ও নারীদের জন্য জলবায়ু সহিঞ্চু জীবিকা সহায়তার উদ্যোগ নিচ্ছে। এজন্য ‘উপকুলীয় জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ৪৩ হাজার পরিবারের নারী সদস্য জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকা সহায়তা পাবে। সেইসঙ্গে ৫৫ হাজার পরিবারের ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫১৬ জন সদস্যের সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২৭৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে ২০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৭ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) প্রকল্প দলিল স্বাক্ষর হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূল বিশেষত দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের নিম্নভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকি, তীব্র ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জোয়ার, অতি জোয়ারজনিত দুর্যোগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব ঝুঁকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে শিগগিরই কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে যে পরিমাণ উষ্ণতা বেড়েছে, তাতে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের নিম্নাঞ্চলগুলোর বড় অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে অবস্থান করবে এবং লবণাক্ততা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ অঙ্গীকার ব্যর্থ হলে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত দক্ষিণ-পশ্চিমা অঞ্চলে আর ও তীব্রভাবে অনুভূত হবে। ফলে দরিদ্র মানুষের জীবিকা ও সুপেয় পানিসহ জীবনযাপনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ কঠিন হয়ে পড়বে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ইতোমধ্যে সরকারি এবং বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায রাষ্ট্র অনেক কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সুপেয় পানি ও টেকসই জীবিকা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় উপকূলের বিশেষ করে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার নিম্নাঞ্চলের পাঁচটি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য ইউএনডিপির সহযোগিতায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণায় প্রকল্প প্রণয়ন করে সবুজ জলবায়ু তহবিলে দাখিল করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সবুজ জলবায়ু তহবিলের ১৯তম বোর্ড মিটিং এ প্রকল্পটি অর্থায়নের জন্য অনুমোদিত হয়।
জানা গেছে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এ প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা ও গুণগত মান নিশ্চিতকল্পে স্বীকৃত সংস্থা হিসাবে কাজ করবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে উপকূলবর্তী নারী সমাজকে জলবায়ু অভিযোজনের অনুঘটক হিসাবে প্রস্তুত করা হবে; যেখানে তারা জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি জীবিকার দ্বার উম্মোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রকল্পটির সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হবে আনুমানিক ৭ লাখ ১৯ হাজার ২২৯ জন। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫১৬ জন এবং পরোক্ষ সুবিধাভোগী ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭১৩ জন।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- উপকূলীয় কৃষিজীবী জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীদের জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকায়নে অভিযোজন দক্ষতা বাড়ানো, নারীদের জন্য দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সতর্কীকরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নলকূপ স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট সাইট ম্যাপিং, উপকারভোগী নির্বাচন এবং কমিউনিটি ব্যবস্থাপনা কাঠামো গঠন, এক হাজার ১১৮টি দলগঠন, সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, জীবিকা পরিকল্পনা, সঞ্চয় ও ঋণবিষয়ক পরামর্শ সেবা, আগে থেকেই সতর্কতা বিষয়ক সচেতনতা সেবা, মহড়া, নিয়মিত গ্রুপভিত্তিক মনিটরিং ও পরামর্শ এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সেবা।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্ট লবণাক্ততা মোকাবিলা ও অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এতে সুপেয় পানি এবং জীবিকার মান উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। সেজন্য প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম