ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে গাইডলাইন, যা হতে পারে সহায়
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:৩৩
ক্যানসার পরিস্থিতির উন্নয়ন, প্রতিরোধ ও সর্বোপরি ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর লালমাটিয়ায় অবস্থিত কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টারে ক্যানসার দিবস উপলক্ষে একটি মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়জনে কমিউনিটি অনকোলজি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম ও মার্চ ফর মাদার। আয়োজকদের পক্ষ থেকে ডাঃ মোঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন সরকার, নীতিনির্ধারক মহল, ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহবান জানান। তিনি বলেন, ক্যানসার এখন আর শুধু বিশেষজ্ঞের বিষয় নয়, প্রতিটি নাগরিকের ভাবনার বিষয়।
সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণমাধ্যম, সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে ক্যানসার সচেতনতায় এবং কার্যকর ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী প্রনয়ন ও বাস্তবায়নে জনমত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। সবাই মিলে দেশের ক্যানসার পরিস্থিতি উন্নয়নে ভুমিকা রাখার জন্য কিছু গাইডলাইন দিয়েছেন।
জেনে নেওয়া যাক তার গাইডলাইন
১. জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রন কাউন্সিল পুনর্গঠন ও কার্যকর করা।
২. জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র প্রণয়ন, হালনাগাদ ও এর আলোকে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ।
৩. ক্যান্সারের সঠিক পরিসংখ্যান পেতে জাতীয় ক্যান্সার নিবন্ধন কর্মসূচী গ্রহণ।
- এর আওতায় জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইন্সটিটিউটে চলমান হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধনকে ডাটাবেজ ও নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে শক্তিশালী করা।
- প্রতিটি বিভাগে অন্তত একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন সম্প্রসারিত করা।
- প্রথমে একটি ও পরে পর্যায়ক্রমে প্রতি বিভাগে একটি উপজেলায় পপুলেশন বেজড বা জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন চালু করা। কেবল এ থেকেই আমরা ক্যানসারের নিজস্ব ও সঠিক পরিসংখ্যান বের করা যাবে।
৪. প্রাথমিক প্রতিরোধ
অনুমোদিত বিভাগীয় ক্যানসার কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পাশাপাশি প্রকল্পের শুরু থেকেই ক্যানসারের প্রাথমিক প্রতিরোধ তথা জনসচেতনতা ও প্রযোজ্য (হেপাটাইটিস বি ও এইচপিভি) টিকা প্রদান কর্মসূচী চালু করা। মোবাইল ক্যানসার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং ইউনিট চালু করা।
৫. ক্যান্সার স্ক্রিনিং
চলমান অসংগঠিত ও অসম্পূর্ণ জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচীর সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের সমাজভিত্তিক সংগঠিত ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জাতীয় কর্মসূচী প্রণয়ণ ও বাস্তবায়ন করা। সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলিকে মানসম্মত সেবা প্রদানের শর্তে সম্পৃক্ত করা।
৬. ক্যানসার চিকিৎসা
ক্যানসার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকল বিশেষায়িত বিভাগগুলিকে সমান গুরুত্ব ও সুযোগ দিয়ে সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসার সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সরকারি সবগুলো মেডিকেল কলেজে ‘পূর্নাংগ ক্যানসার বিভাগ’ চালু করা।
৭. পেলিয়েটিভ বা প্রশমন সেবা
প্রতিরোধ, চিকিৎসার মতই গুরুতবপূর্ণ এই সেবা। আমাদের দেশে এই ধারনাটি বেশিদিনের নয়। ইতোমধ্যে বি এসএমএমইউ-এ একটি পূর্ণাংগ বিভাগ চালু হয়েছে। সকল সরকারি- বেসরকারি ক্যানসার কেন্দ্রে এই সেবা চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।
৮. কারিকুলাম সংশোধন
অনকোলজির সকল বিশেষায়িত কোর্স কারিকুলামের সংশোধন প্রয়োজন। বিশেষ করে ক্যানসার রোগতত্ব, প্রতিরোধ ও গবেষণা পুনরায় যুক্ত করা সংযুক্ত করা সময়ের দাবী। এর অভাবে ক্যানসার প্রতিরোধ কার্যক্রমে ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনক কম। এমবিবিএস কোর্সের কারিকুলামেও এর সংযুক্তি প্রয়োজন।
৯. প্রশিক্ষণ
বিচ্ছিন্নভাবে এবং সংশ্লিষ্টতাবিহীন চিকিৎসক ও সহায়ক জনবলের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নিরুৎসাহিত করে দেশের প্রতিষ্ঠিত সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুসংগঠিত প্রশিক্ষণের আয়োজন অধিকতর কার্যকর হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সুপার স্পেশালিটি বিশেষজ্ঞ তৈরীর পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের (যেমন জেনারেল সার্জারি, গাইনাকোলজি, ইএনটি, প্যাথলজি) প্রশিক্ষণ আয়োজন করা।
১০. চিকিৎসা নয় স্বাস্থ্য, সবার জন্য
সকল পর্যায়ের নীতি প্রণয়ণে রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা নয়, জনগণকে ক্যানসার থেকে সুরক্ষার ধারণা গ্রহণ করতে হবে। ক্যানসার সেবার শুরু হোক প্রতিরোধ দিয়ে।