Thursday 25 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসামে সহিংসতায় নিহত ২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৫১ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৫

পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আসামে উপজাতিদের অন্যতম স্বশাসিত অঞ্চল কার্বি-আংলং এলাকায় সহিংসতায় দুজন নিহত হয়েছেন। পরে ওই এলাকায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি এবং মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজাতীয়দের এলাকায় হিন্দিভাষী, বাঙালি ও নেপালিরা ‘দখল করে রেখেছে’ এবং ওই ‘বহিরাগতদের উৎখাত করতে হবে’–– এই দাবি নিয়ে অনশন আন্দোলন চলছিল গত ৬ ডিসেম্বর থেকে। পরে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) অনশনকারীদের ‘তুলে’ গুয়াহাটিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। তারপরে সহিংসতা শুরু হয়। মঙ্গলবারও সহিংসতা চলে।

বিজ্ঞাপন

আসাম পুলিশের মহাপরিচালক হরমিত সিং সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘আমি নিজে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। অনশন আন্দোলন যারা করছিলেন, তাদের নেতাকে চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটিতে নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তারদের পরামর্শেই। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। এরপরই ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, এরপরেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা একটি সেতু দখল করতে চেষ্টা করলে তার বাহিনী যখন বাধা দেয়, তখন পুলিশের ওপরে বোমা নিক্ষেপ করে ও তীর ছুঁড়ে হামলা চালানো হয়।

এরপরে বহিরাগতদের দোকান ভাঙচুর, পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ইট ছোঁড়াছুঁড়ি করতে দেখা যায় সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিওতে।

কী দাবিতে আন্দোলন?

সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী কার্বি আংলং অঞ্চলটির প্রশাসন চালায় স্বয়ংশাসিত একটি কাউন্সিল। এখানকার জমি, অরণ্যের ওপরে উপজাতীয়দের অধিকারও সংরক্ষিত আছে।

ওয়েস্ট কার্বি আংলং জেলার কার্বি উপজাতীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগত, অ-উপজাতীয় মানুষ তাদের সংরক্ষিত অঞ্চলে জমি দখল করে আছেন।

কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংরক্ষিত এলাকা থেকে উচ্ছেদের নোটিশ দিলেও গৌহাটি হাইকোর্টে দায়ের করা একটি পিটিশনের ফলে সেই প্রক্রিয়া নিয়ে এগোনো যায়নি।

গত এক বছর ধরে স্থানীয় উপজাতীয়রা দাবি করে আসছেন, বহিরাগত এবং দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। অবশেষে কার্বি উপজাতীয়রা ৬ ডিসেম্বর থেকে এই দাবি নিয়ে অনশন শুরু করেন।

এর আগে রাজ্যের মন্ত্রী রনোজ পেগুও ওয়েস্ট কার্বি জেলার খেরোনিতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ২৬ ডিসেম্বর রাজ্য সরকার, কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিল এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে।

রনোজ পেগু বলেছিলেন, ‘আমরা কার্বি সমাজকে বলেছিলাম যে সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে জমির অধিকার এবং উপজাতীয়দের অন্যান্য সমস্যাগুলো নিয়ে দেখছে। কার্বি সমাজের বৃহত্তর সমস্যাগুলো নিয়েও আলোচনা হবে।’

সহিংসতার শুরু যেভাবে

আলোচনা করার কথা থাকলেও সোমবার থেকে হঠাৎই সহিংসতা শুরু হয়।

সংবাদ সংস্থা এএনআই এবং আসামের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সোমবার অনশনরত আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে পুলিশ সরিয়ে নিয়ে গেলে প্রথমে স্থানীয় কিছু মানুষ রাস্তা অবরোধ করেন। এরপরে তারা মিছিল করে গিয়ে ডংকামুকাম এলাকায় কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিলের প্রধান তুলিরাম রংহাঙের পারিবারিক বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

দফায় দফায় সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা মঙ্গলবার রাতে তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেছেন।

রাজ্য পুলিশের আইজি আইনশৃঙ্খলা অখিলেশ কুমার সিং সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানান, আন্দোলনকারীদের ছোড়া পাথর এবং ইটের ঘায়ে অন্তত ৪৮ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়তি পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসা হয়েছে।

অন্যদিকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা অনুযায়ী স্বাভাবিক চলাচলে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়। একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি মানুষ একত্রিত হওয়া, বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ, মশাল নিয়ে মিছিল করা ইত্যাদি নিষিদ্ধ হয়েছে কার্ব আংলং এলাকায়। সেদিন থেকেই মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর