ঢাকা: আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমিনুল গণি টিটু সরে যাওয়ায় নতুন স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (২৫ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সিদ্ধান্তে এ নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর আগে, বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে আদালত অবমাননার মামলায় স্টেট ডিফেন্স হিসেবে আমিনুল গণি টিটুকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে নিজের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তিনি। পরে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘আদালত অবমাননার মামলার শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এওয়াই মশিউজ্জামান ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তুতির জন্য তিনি এক সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ২ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন।’
তিনি বলেন, ‘এ মামলায় শেখ হাসিনা ও বুলবুলের পক্ষে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী আমিনুল গণিও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু একটি ইস্যু জানতে পেরে নিজেকে প্রত্যাহারের আবেদন করেন। পরে তাকে প্রত্যাহার করে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।’
এর আগে, ১৯ জুন এ মামলায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এওয়াই মশিউজ্জামানকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।
প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও হাজির হয়ে বা আইনজীবীর মাধ্যমে কোনো ব্যাখ্যা দেননি শেখ হাসিনা। আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি দিতে পারবে আদালত। অভিযোগ প্রমাণ হলে এক বছরের সাজা ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
এছাড়া বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলের বিরুদ্ধে হওয়া আদালত অবমাননার এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত এওয়াই মশিউজ্জামানের বক্তব্য শুনবেন।
গত ২৬ মে শেখ হাসিনাকে উপস্থিত হতে দৈনিক যুগান্তর ও ইংরেজি নিউ এজ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর আগে, ২৫ মে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তাদের হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মুঠোফোনে ভারত থেকে বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করা ও হুমকির অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে তদন্ত সংস্থা। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে গত ৩০ এপ্রিল আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১৫ মে’র মধ্যে তাদের লিখিত জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দেওয়ায় ২৫ মে দুই আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা হাজির হননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, ‘২২৭টি মামলা হয়েছে, ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’- শেখ হাসিনার দেওয়া এমন অডিও বক্তব্যের প্রমাণ পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারীরা। এরপরই আদালত অবমাননার আবেদন দাখিল করা হয়।