ঢাকা: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ-জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২০ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (১৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন এ মামলায় তিনজন সাক্ষী নিজেদের জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- শহিদ ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার, তার প্রতিবেশী চাচা শহীদ আহমেদ ও শহিদ মো. ইসমামুল হকের ভাই মহিবুল হক। তারা তিনজনই আসামিদের বিচার ও ফাঁসি চেয়েছেন। এর মধ্যে ইয়াকুবের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, তারেক আবদুল্লাহসহ অন্যান্যরা।
এর আগে, ১২ আগস্ট দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। ওই দিন দুই নম্বর সাক্ষী হিসেবে চানখারপুলের ঘটনা নিয়ে জবানবন্দি দেন আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিন। তিনি একটি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। এছাড়া ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে তৃতীয় সাক্ষীর জবানবন্দি দেন শেখ জামাল হাসান।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দুজনকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এর মধ্যে আরশাদের পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি। সুজন ও নাসিরুলের পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী আবুল হাসান ও ইমাজ হোসেন ইমনের পক্ষে আইনজীবী মো. জিয়াউর রশিদ জেরা করেন। সবশেষ পলাতক চার আসামির পক্ষে সাক্ষী পলাশকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী কুতুবউদ্দিন আহমেদ।
গত ১১ আগস্ট প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। এদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্য শেষে মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহিদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ। সাক্ষী হয়েই নিজের ছেলেসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অন্যান্য নিহত-আহতদের জন্য দায়ীদের ফাঁসি চেয়েছেন তিনি।
এদিকে, আজও কারাগার থেকে এ মামলার চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
এর আগে, ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
গত ৩ জুলাই এ মামলার অভিযোগ গঠন নিয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়। সেদিন আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সিফাত মাহমুদ শুভ। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম।
এছাড়া পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও ট্রাইব্যুনালে হাজির হননি সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চারজন। বাকিরা হলেন- ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
গত ২৯ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়। তবে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন শুনানির জন্য সময় চান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
গত ৩ জুন পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ মে এ মামলায় আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই দিন পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।