ঢাকা: লাশ পোড়ানোর মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২ এ তদন্ত কর্মকর্তা জানে আলম খান সাক্ষ্য দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার পতনের দিন আশুলিয়ায় ছয় জনের মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিনি ২৪তম সাক্ষী।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার পর ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের প্যানেলে নিজের জবানবন্দি পেশ শুরু করেন জানে আলম। প্যানেলের অন্য সদস্য জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। তার সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হলেই মামলাটি যুক্তিতর্কের ধাপে প্রবেশ করবে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে আজ শুনানি করছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যান্যরা।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর মামলার ২০তম দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন পুনঃজবানবন্দি দেন তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান এসআই আনিসুর রহমান। ২০ নভেম্বর রাজসাক্ষী এসআই শেখ আবজালুল হকের জেরা শেষ হয়। এর আগের দিন ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি সাক্ষ্য দেন।
গত ৫ নভেম্বর ২২তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব। তার সামনেই একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকে আগুনে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। ৩০ অক্টোবর সাক্ষ্য দেন গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগী সানি মৃধা। ২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি পুলিশের গুলিতে নিজে আহত হওয়ার কথা জানান এবং গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নির্মমতার বিবরণ তুলে ধরেন।
এর আগের বিভিন্ন দিনে জব্দ তালিকার সাক্ষী এসআই মো. আশরাফুল হাসান রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধারসহ আলামতের বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনে সাক্ষ্য দেন শহিদ সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহিদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। এর পূর্বদিন সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
মামলায় গ্রেফতার আট আসামি হলেন— ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, এসআই শেখ আবজালুল হক এবং কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আরও আটজন এখনও পলাতক।
চলতি বছরের ২১ আগস্ট ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। এসময় উপস্থিত সাত আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আগ্রহ জানান। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশ রেকর্ড করে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে অনুমতি দেওয়া হয়।
এর আগে ২ জুলাই প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয়। এতে ৩১৩ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৬২ সাক্ষীর তালিকা, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ এবং দুটি পেনড্রাইভ সংযুক্ত করা হয়। পরে এসব আমলে নিয়ে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ প্রাণ হারান। পরে পুলিশ ভ্যানে তাদের মরদেহ নিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। তখনও একজন জীবিত ছিলেন; তাকেও পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। এর আগের দিন আরও একজন শহিদ হন। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।