Friday 12 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণপিটুনিতে রেনু হত্যা: ৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ জুলাই ২০২৩ ১১:৫৮

ঢাকা: ২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার খোঁজখবর নিতে গিয়ে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার হন তিনি। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পাঁচশ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। মামলার দায়েরের চার বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছেন, এই বছরই মামলার বিচার কাজ শেষ হবে।

বর্তমানে ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৫ জুন এ মামলায় এক ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। আগামী ২৪ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

রেনুর বোন নাজমুন নাহার নাজমা বলেন, মাহির এখন উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে হোস্টেলেই থাকে। আর তুবা মহাখালী শিশুমেলা স্কুলের ক্লাশ টুতে পড়ালেখা করছে। রেনুর মৃত্যুর পর প্রতিদিনই দুই ছেলে-মেয়ে তাদের মায়ের কথা বলে। মাহি তার মায়ের কথা চিন্তা করতে করতে পড়ালেখা পিছিয়ে যাচ্ছে। মাহি যেভাবে অ্যাক্টিভ মাইন্ডের ছিল, এখন আর ওইরকম নেই। এখন সে তার মায়ের ছবি, ভিডিও গুলো দেখে আর কান্নাকাটি করে। এখন সে সব কিছু বুঝে গেছে। এখন সব সময় সে এইগুলো নিয়ে পড়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ওইদের দুই ভাই-বোনকে নিয়ে আমার সব সময় মেন্টাল ট্রমা কাজ করে। বাবা-মা ছাড়া দুই ছেলে-মেয়ে লালন পালন করা কত কষ্টের। এই চারটা বছর আমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়েগেছে। মাহি হোস্টেলেই থাকলে ভালো থাকে, কিন্তু বাড়িতে আসলে আবার মায়ের ছবি নিয়ে পড়ে থাকে। আর তুবা এখানেও বুঝার মত বুদ্ধিজ্ঞান হয়নি। তুবা আমাকে আর আমার স্বামীকে বাবা-মা বলে ডাকে। তবে তুবা এখন কিছুটা বুঝতে পারে তার মা আর নেই পৃথিবীতে।

নাজমা বলেন, স্কুলের ছেলে-মেয়ে মাঝেমধ্যে বলে ফেলে তুবার মা মারা গেছে। স্কুল শেষে বাসায় ফিরে খুব মন খারাপ করে, তখন আমারও অনেক কষ্ট হয়। আমরা অনেক কষ্টে আছি। দুইটা বাচ্চা ঢাকাশহরে রেখে পড়ালেখা করানো অনেক খরচ। এছাড়াও আমারও দুইটা বাচ্চা আছে। আমার মা কিছুদিন আগে বোনের শোকে শোকে দুনিয়া থেকে চলে গেছে। আমার বোন কেন মারা গেছে সে এটা জেনে যেতে পারলো না। বিনাদোষে কোন কারণ ছাড়াও তাকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো। যারা এই নিরপরাধ মানুষকে খুন করলো তাদের বাংলাদেশের আইন অনুসারে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আসামিরা হুজুগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে একজন মধ্যে বয়সী নারীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এরা সমাজের শত্রু। এদের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। সাক্ষীরা নিয়মিত আসলে আশা করছি, এই বছরই মামলার বিচার শেষ হবে। মামলাটির রায়ে প্রকৃতি দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করছি।

মামলাটির বাদী সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু জানান, পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে। এমন অভিযোগ এনে আমার খালাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে কোন সেতুর জন্য মাথা লাগবে এমন গুজবে কাউকে হত্যা করা না হয়। সেই বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আশা করছি, দ্রুত বিচার শেষ হবে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে। যা বিশ্ব দেখবে। এমন একটা বিচার হবে যার বার্তা হবে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সমাজ।

এদিকে, আসামি রিয়ার আইনজীবী হাবিবুর রহমান জানান, রিয়া বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যান। সেখানে গিয়ে ছেলে ধরা এক নারীর কথা জানতে পারেন। ওই নারীর কথাবার্তাও অসংলগ্ন ছিলো। তিনি সেখানে যান। ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখা যায়। যাই হোক মামলার বিচার চলছে। আসামিকে নির্দোষ প্রমাণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, ন্যায়বিচার পাবেন।

আসামি হৃদয়ের আইনজীবী জানান, হৃদয় ওই স্কুলের সামনে সবজি বিক্রি করতো। সে দেখে কিছু লোকজন এক মহিলাকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করছে। অতিউৎসাহিত হয়ে পরে সেও সেখানে যায়। মারা যাওয়ার পর সেও লাশের ওপর ২/৩ টা বারি মারে। এই হলো তার অপরাধ।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করাবেন বলে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই রেনুর বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫শ’ জনকে আসামি করা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গণপিটুনিতে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করে পুলিশ।

২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু আদেশ দেন।

চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন-ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা, রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, মো. শাহিন, বাচ্চু মিয়া, মো. বাপ্পি, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, আসাদুল ইসলাম, বেল্লাল মোল্লা, মো. রাজু ও মহিন উদ্দিন। এদের মধ্যে দুই জনকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়াও মামলাতে জাফর হোসেন পাটোয়ারী ও ওয়াসিম আহমেদ অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রিয়া বেগম, বাচ্চু মিয়া, শাহীন, মুরাদ ও বাপ্পি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

আসামি জাফর হোসেন পাটোয়ারী ও ওয়াসিম আহমেদ অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মামলাটিও সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।

সারাবাংলা/এআই/এনইউ

বিজ্ঞাপন

‘চিঠি দিও’
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৩২

খুলনায় যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:২৫

আরো

সম্পর্কিত খবর