ঢাকা: এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) ‘ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কোর প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সিইসি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন—এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
তিনি জানান, ইসির প্রধান দায়িত্ব সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। নির্বাচনে কোনো ‘ধানাই-পানাই’ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফাঁকিবাজি বা ধোঁকাবাজি চলবে না। কমিশন থেকে মাঠপর্যায়—সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।’
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের ‘নিউক্লিয়াস’ উল্লেখ করে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি বা ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই কমিশন হোঁচট খাচ্ছে। তাই কর্মকর্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে কমিশনের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় ‘বিতর্কিত ভোটের’ জন্য সাবেক দুই সিইসির এখন কারাবান্দী ও জুতার মালা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগের বিষয়টিও তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনাররা। এ সময় সাবেক দুই সিইসির বিষয় দুঃখজনক, বিশ্লেষণ দরকার বলেও মনে করেন নির্বাচন কমিশনররা।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “আমার সহকর্মী বললেন, নির্বাচনটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এখানেই শেষ নয়। সাবেক এক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জুতার মালা পরানো হয়েছে, আরেকজন বর্তমানে কারাবন্দী। এটি দুঃখজনক। এ পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী—গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন। একসময় বিশ্লেষণ ও গবেষণা হবে। তবে আমরা যারা আজ দায়িত্বে আছি, আমাদের কী করা উচিত—সেটাই মুখ্য প্রশ্ন।” সমান সুযোগ সৃষ্টিতে ইসির ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি।
এদিকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি ও আইন-কানুন বিষয়ে কর্মকর্তাদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। আদালতের আদেশে এক যুগ পর চাকরিতে ফিরে আসা ৬০ জন নির্বাচন কর্মকর্তাকে শুধু পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে কমিশন প্রায় ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। আগে পুরুষ ভোটারের জন্য একটি বুথে ৫০০ এবং নারী ভোটারের জন্য ৪০০ জন নির্ধারিত ছিল। এখন তা যথাক্রমে ৬০০ ও ৫০০ করা হয়েছে।
‘এর ফলে প্রায় ৪৯ হাজার বুথ কমানো সম্ভব হয়েছে, সাথে সাথে দেড় লক্ষ নির্বাচন কর্মকর্তার প্রয়োজনও কমেছে। শুধু একটি সিদ্ধান্তেই এত বড় অঙ্কের ব্যয় সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতেও প্রতিটি ধাপে মিতব্যয়িতা নিশ্চিত করতে হবে।’