Thursday 16 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া জবাবদিহিতার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ: ভলকার টুর্ক

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:২৮ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ১১:০৯

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক।

ঢাকা: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে আগের সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জবাবদিহিতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

তিনি বলেন, ‘দেশে এই প্রথমবার জোরপূর্বক গুমের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক মামলা হয়েছে। নিহতদের ও তাদের পরিবারের জন্য এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।’

বুধবার (১৫ অক্টোবর) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে টাস্ক ফোর্স ফর ইনট্রোগেশন সেল ও যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের কাছে জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বেশ কয়েকজন সাবেক ও কর্মরত সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাদের মধ্যে আছেন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)–এর সাবেক মহাপরিচালক এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

গত শনিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানায়, আগের প্রশাসনের সময় সংঘটিত গুরুতর অপরাধের অভিযোগে তারা এক ডজনেরও বেশি কর্মকর্তাকে আটক করেছে। ভলকার টুর্ক বলেন, ‘সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ফৌজদারি কার্যক্রমের জন্য এসব কর্মকর্তাকে দ্রুত উপযুক্ত বেসামরিক আদালতে হাজির করা জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনে নির্ধারিত যথাযথ প্রক্রিয়া ও সুষ্ঠু বিচারের কঠোর মানদণ্ডের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানাতে হবে। এসব সংবেদনশীল মামলায় ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছরের ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের ফ্যাক্ট–ফাইন্ডিং রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছিল— মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

২০২৪ সালের আগস্টে জোরপূর্বক গুম–সংক্রান্ত কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের পর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জোরপূর্বক গুমকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

হাইকমিশনার টুর্ক আরও বলেন, আগের প্রশাসনের সময় দায়ের হওয়া কিছু মামলাসহ সব মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তিরও আহ্বান জানান তিনি।

তার মতে, গুম থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, সাংবাদিক ও সাবেক সরকারের সমর্থক হিসেবে বিবেচিত অনেকের বিরুদ্ধে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা রয়েছে— যেগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা প্রয়োজন।

তিনি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান, অভিযোগের গুরুত্ব যাই হোক না কেন, আদালতে যেন কোনও মামলাতেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া না হয়।

ভলকার টুর্ক বলেন, ‘ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো সত্য উদঘাটন, ক্ষতিপূরণ, নিরাময় ও ন্যায়বিচারের সমন্বিত প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা। মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়ন যেন আর না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, এসব উদ্বেগ আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুসারে মোকাবিলা করতে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর