চুয়াডাঙ্গা: ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের একই পরিবারের ১৪ জনকে রাতের আঁধারে বাংলাদেশ পুশইন করেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। পরে প্রচণ্ড শীতে হিন্দি ভাষাভাষী এ মানুষগুলোর ঠাঁই হয় দর্শনায় খোলা আকাশের নিচে। এক পর্যায়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের পাশ থেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে সীমান্তের কাঁটাতার গলিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে তাদের পুশইন করে বিএসএফ।
কনকনে শীতের মধ্যে অবৈধ এই প্রবেশকারীদের ঠাঁই হয় খোলা আকাশের নিচে। পরে খবর পেয়ে শীত নিবারণের জন্য তাদের শীতবস্ত্র দেয় চুয়াডাঙ্গা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিকে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনি প্রক্রিয়ায় করণীয় কী আছে সেটি নিয়ে ভাবছে বিজিবি ও পুলিশ।
পুশইন করা ভারতের এই নাগরিকদের দাবি, তারা ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা। এদের সবাই হিন্দি ভাষাভাষী। বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে এসে ভারতের নাগরিকত্বের সব কাগজপত্র কেড়ে নিয়েছে। এর পর সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশ অনুপ্রব্শে করায়। তবে চুয়াডাঙ্গার কোন সীমান্ত দিয়ে এদের পুশইন করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে রয়েছেন শেখ আব্দুর জব্বারের (৭৩) ছেলে হাকিম শেখ (৪৮), শেখ উকিল (৪৫), শেখ বান্টি (৩০), শেখ রাজা (৩৮), শেখ জব্বারের স্ত্রী আলকুনি বিবি (৬৫), শেখ উকিলের স্ত্রী সাগেরা বিবি (৩৬) ও তার মেয়ে শাকিলা (৯), শেখ রাজার স্ত্রী মেহরুন বিবি (২৮) ও তার মেয়ে নাসরিন (১০), ছেলে রোহিত (২) তৈহিদ (১১), শেখ হাকিমের স্ত্রী শমশেরি বিবি (৩৪) ও শেখ হোসেনের স্ত্রী গুলশান বিবি (৮০)।
জানা গেছে, ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের জগসিং জেলার সাতকুড়া ধনিপুরে ৭০ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন হারুন অর রশিদের ছেলে আব্দুর জব্বার (৭৩)। তারা সবাই মুসলিম। ভারতের উড়িষ্যার নাগরিক। সেখানে তাদের বাড়িঘর আছে।
জব্বার জানান, আড়াই বছর বয়স থেকে বাবা-মায়ের হাত ধরে তারা উড়িষ্যায় বসবাস শুরু করে। সেখানেই তার বিয়ে ও সংসার শুরু হয়। বাংলাদেশের কোন জেলায় তাদের বাড়ি ছিল, তার কিছুই জানেন না তিনি। মাস খানেক আগে এক গভীর রাতে সেখানকার থানা পুলিশ জব্বারসহ তার পরিবারের ১৪ সদস্যকে ধরে নিয়ে যায়। ভারতীয় পুলিশ তাদের বাংলাদেশি বলে জেলে পাঠায়। পরে আটগড় জেলখানায় ১ মাস ৫ দিন হাজত বাস শেষে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তারা সকলে মুক্তি পান। ওই দিনগত রাত ৩ টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা তাদের ১৪ জনকে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। এর আগে তাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়।
অনুপ্রবেশকারী দেওয়া তথ্যনুযায়ী, তাদের চুয়াডাঙ্গার দর্শনা নীমতলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ফজরের আজানের পর তারা অবস্থান নেয় দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে। দিন গড়ালেও বিষয়টি জানাজানি হয়নি। তবে রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি জানাজানি হয়। এদিন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। তারা এসে তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়।
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী অনেকেই অসুস্থ। হাসপাতালে নিয়ে আগে চিকিৎসা করানো হবে। তারপর জেলা প্রশাসক ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’