প্রতিরোধ বাহিনী সৃষ্টি সময়ের দাবি: রাষ্ট্রপতি
৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৪৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। আর সেই নীতি বজায় রাখার স্বার্থে কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ নীতির সমন্বয়ে একটি যুগোপযোগী বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ বাহিনী সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি।
রোববার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেছেন।
মিডশিপম্যান-২০১৬ এবং ডিইও ২০১৮/বি ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষে এই শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সাথে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরক্ষার্থে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে আমরা আপসহীন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্য যে-কোনো ত্যাগ স্বীকারে কখনো পিছপা হবে না বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, নবীন অফিসারদের মধ্যে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য একটি যুগোপযোগী নেভাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে। ‘ফলে অধিক সংখ্যক দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণার্থীকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অপার সম্ভাবনাময় ‘ব্লু-ইকোনমি’ বা সুনীল অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ সুবিধা আহরণের ক্ষেত্রেও সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশমাতৃকার নিরাপত্তার স্বার্থে তোমরাই হবে এই নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ কর্ণধার। সততা, নেতৃত্ব গুণাবলী ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে তোমরা নিরন্তর এগিয়ে যাবে জাতির প্রয়োজনে। ‘আমাদের নৌবাহিনী জনগণের যে আস্থা এবং ভালোবাসা অর্জন করেছে, যে কোনো মূল্যে তা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়’ এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে পেশাদারিত্ব, দেশপ্রেম, ও কর্তব্যনিষ্ঠা দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে তোমরা নতুন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে, জাতি তা প্রত্যাশা করে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সমুদ্র অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং সমুদ্র সম্পদ রক্ষার্থে একটি দক্ষ ও চৌকস নৌবাহিনীর বিকল্প নেই।
জাতির পিতার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে গৃহীত হয়েছে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’। এই মহাপরিকল্পনার আলোকে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ও করভেটসহ মোট ২৭টি যুদ্ধ জাহাজ সংযোজিত হয়েছে। ‘২০১১ সালে সংযোজিত নেভাল এভিয়েশন, স্পেশাল ওয়ার ফেয়ার ডাইভিং এবং স্যালভেজ কমান্ড বা ‘কমসোয়াডস’ এ বাহিনীর সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বোপরি, ২০১৭ সালে নৌবহরে যুক্ত হওয়া দুটি সাবমেরিন আমাদের প্রিয় নৌবাহিনীকে সত্যিকারের একটি পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে নৌবাহিনীর ২০১৬ ব্যাচের ৫৯ জন মিডশিপম্যান ও ২০১৮/বি ব্যাচের ৭ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ মোট ৬৬ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। এদের মধ্যে ৪ জন নারী, ১ জন মালদ্বীপ এবং ১ জন শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তা রয়েছেন।
সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে মিডশিপম্যান আহমেদ রিদওয়ান খান সেরা চৌকস হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ পেয়েছেন। মিডশিপম্যান ইজাজ মাহমুদ শুভ ‘নৌ প্রধান স্বর্ণপদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ব্যাচ থেকে এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট সাঈফ হোসেন সুধী ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ