Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেলফি না তুলে কয়েক বালতি পানি আনলেই হয়: প্রধানমন্ত্রী


৫ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:৫৫

ঢাকা: আগুনের সময় উৎসুক জনতার ভিড়ের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খামাখা কিছু লোক অহেতুক ভিড় করে। এদের কারণে ফায়ার সার্ভিস ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এরা দাঁড়িয়ে থেকে সেলফি তোলে। এখানে সেলফি তোলার কী আছে বুঝলাম না। সেলফি না তুলে তারা কয়েক বালতি পানি আনলেই পারে।’

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন দিন আগে বহুতল ভবনে আগুন লেগেছে। বেশকিছু লোক হতাহত হয়েছেন। যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। কিছুদিন পরপরই আগুন। যদিও ছোটবেলা থেকে আমরা জানি চৈত্র-বৈশাখ মাসে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি। একটা কথা বলব, উত্তেজিত লোক ফায়ার সার্ভিসের একটা গাড়িও ভেঙে দিয়েছে। একটি গাড়ি কিনতে ৯-১০ কোটি টাকা খরচ পড়ে। ফায়ার সার্ভিস আসতে দেরি হচ্ছে কেন সে জন্য ফায়ার সার্ভিসের লোকদের মারছে। সেটা না করে এক বালতি পানি এনে নেভানোর চেষ্টা করত তাহলে ভালো কাজ করতে।’

আরও পড়ুন: চৈত্র-বৈশাখ মাসে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা অল্প বয়সী ছেলে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। অকারণে সেখান ভিড় করে। ফায়ার সার্ভিস যেতে পারে না। ছবি তোলে, সেলফি তোলে। আগুন নেভানোর চেষ্টা করুক, উদ্ধার কাজ করুক। তা না করে সেলফি তোলে। আমি অবাক হয়ে যাই। এ ধরনের ঘটনায় কীভাবে সহায়তা করা যায়, সেটা না। পরে আমি আইজিপিকে বললাম, সবাইকে যেন আহ্বান করা হয় তারা রাস্তা থেকে যেন লোকজনকে যেন সরিয়ে দেয়। পরে তারা সেটা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় মিডিয়ারও ভূমিকা আছে। মিডিয়া যখন সরাসরি সম্প্রচার করে তখন মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। ভিড় বাড়ে। এই কারণে মিডিয়াকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

ভবন মালিকসহ ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগুন লাগলে ফায়ার ব্রিগ্রেড আগুন নেভাবে। কিন্তু আগুন যেন না লাগে, যারা দালান-কোঠা বানান, যারা বসবাস করেন, যারা ব্যবহার করেন, তাদেরও দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্বটা পালন করা হয় না। আর দুর্ঘটনা হলে সব দোষ হয় সরকারের। তাই ভবনের প্রতি ইঞ্চি জায়গা শুধু লাভজনকভাবে ব্যবহার করতে যেয়ে নিজেদের সর্বনাশটা কেউ ডেকে এনে একেবারে সর্বস্বান্ত হবেন না।

বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন দুর্ঘটনার সময় আশপাশের কিছু ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সহযোগিতায় কথাওও স্মরণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা এসেছিল এবং অন্যান্যরা নিজেরা ভলান্টিলিয়ার হয়। দুইপাশের লোকজনকে সরিয়ে রাস্তা করে দেয় যেন ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িগুলো আসতে পারে, তারা সেটা করেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও কিছু লোক দেখেছি, তাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে, তারা এই দায়িত্বটা পালন করেছে। ভবিষ্যতে সবাই এইভাবেই দায়িত্ব পালন করবে, সেটাই আমরা চাই।’

আগুন দুর্ঘটনার সময় রাজধানীতে জলাধার বা খাল-বিল, লেক স্বল্পতার কারণে পানি সংকটে পড়তে হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গুলশান লেক এখন যা আছে, তার দ্বিগুণ চওড়া ছিল। এক একজন ক্ষমতায় এসেছে, জিয়া এসেছে, ওখানে প্লট বানিয়ে দিয়েছে, এরশাদ এসে প্লট বানিয়েছে, এভাবে বানাতে বানাতে এখন লেকের অর্ধেক আছে। আর বনানী লেকটা তো বন্ধই। বিএনপির আমলে বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে প্লট, বিএনপি পল্লী হয়ে গেছে সেখানে। এইভাবে জলাধারগুলোকে ধ্বংস করা, এটা সবার বোঝা উচিত যে আগুন লাগলে পানি নেই, ভূমিকম্প হলে কোথাও গিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নেই? তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে?’

ভবনের ইন্টেরেয়র ডিজাইন করতে গিয়ে ফায়ার এক্সিট পর্যন্তও বন্ধ করে দেওয়া হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই আমি বলব, যারা স্থাপনাগুলো ব্যবহার করছেন তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব আছে। যেন সেখানে আগুন না লাগে, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকে।

অগ্নিদুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস, ২৭ এপ্রিল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী, ২৮ এপ্রিল শহীদ শেখ জামালের জন্মদিন,  ১ মে মহান মে দিবস, ৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবস (তত্ত্বাবধায়ক সরকার), ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচিসহ শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

কার্যনির্বাহী সংসদের সভা পরিচালনা করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আইন বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বদরউদ্দীন আহমদ, এসএম কামাল হোসেন, আমিরুল আলম মিলন, মির্জা আজম, এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার, পারভীন জামান কল্পনা, ইকবাল হোসেন অপু, মারফা আক্তার পপিসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আগুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর