Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণমাধ্যমে সামন্ত সংস্কৃতি বিরাজ করছে: সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা


২৫ মে ২০১৯ ২২:২৯

ঢাকা: বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে এক ধরনের সামন্ত সংস্কৃতি বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সারাবাংলা ডটনেট ও গাজী টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে ২০১৯’ উপলক্ষে পেন বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে সাংবাদিকদের ঐক্য ভেঙে যাওয়ায় আজ ঠিকমতো কথা বলা যাচ্ছে না। এর সুবিধা নিচ্ছে মালিক ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানুষসহ অনেকে। এ সব কারণে গণমাধ্যমখাতে একধরনের সামন্ত সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এ সংস্কৃতি আমাদের ভাঙতে হবে। গণমাধ্যমকে জনগণের আরও কাছাকাছি নিতে হবে, তবেই এর সুস্থ বিকাশ হবে।’

বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এই সহ-সভাপতি বলেন, ‘এদেশের একজন সাংবাদিককে নিরন্তর লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এই লড়াই নিজের সঙ্গে, সহকর্মীর সঙ্গে, মালিকের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে, রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে, এমন কি কখনও কখনও নিজের সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গেও করতে হয়। প্রতিটি স্তরে তাকে বুঝে নিতে হয় কত কঠিন তার এই পেশা।’

মত প্রকাশের স্বাধীনতার সামনে বিস্তর বাধা উল্লেখ করে এ সাংবাদিক নেতা বলেন,  ‘সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা নেই, অনেক প্রতিষ্ঠানে ঠিকমত বেতন হয় না। কারণ গণমাধ্যম অর্থনীতি নতুন সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে নিয়মিত। সংবাদপত্র পাঠকের স্বল্পতা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে, গণমাধ্যমের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখা এখন আরেক লড়াই!’

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যাপক বিস্তার এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে পাঠক-দর্শক টেনে নেওয়ার পাশাপাশি এখন তারা গণমাধ্যমের একমাত্র আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন ছিনিয়েও নিচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমকর্মীদের রাজনৈতিক বিভাজনকে উদ্বেগের কারণ উল্লেখ করে এই সাংবাদিক বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিজেদের উদ্যোগে সংবাদমাধ্যমগুলো প্রাতিষ্ঠানিক না হয়ে উঠলে সাংবাদিকতার মান বাড়বে না, স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে না, আর্থিক অবস্থার কোনো বিকাশও হবে না।’

এ সময় তিনি সংবাদ মাধ্যমের জন্য গণমাধ্যমের অভ্যন্তরীণ ঝামেলা, সরকার ও জাতীয় সমস্যা এবং উগ্রবাদ ও ধর্মান্ধতার মতো তিনটি বিষয়কে প্রধান সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করেন।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজহা বলেন, ‘যেসব সাংবাদিক প্রগতিশীল এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এসব হামলার পেছনে জড়িত রয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। রাষ্ট্রকে মৌলবাদের বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্র যদি মৌলবাদ তোষণ করে, তাহলে জনগণও সেটি অনুসরণ করবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সামগ্রিক প্রচেষ্টা দরকার, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

‘ওয়ার্ল্ড প্রস ফ্রিডম ডে ২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

ইংরেজি সাহিত্যের এই শিক্ষক বলেন, ‘সরকারের সমালোচনা করা অপরাধ নয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এটিকে অপরাধের চোখে দেখা হয়। ফলে প্রাগ্রসর ও উদার একটি রাষ্ট্র থেকে আমরা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণশীল রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছি। একটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক কোনো বার্তা দিচ্ছে না।’

তরুণদের চাকরিমুখি প্রবণতার সমালোচনা করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণরা এখন প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের জন্য পড়ে। পুলিশ ভেরিফিকেশনে চাকরি হবে না- এই চিন্তা থেকে তারা রাষ্ট্রের কোনো অন্যায়ের সমালোচনা করে না। তরুণদের নিয়ে এ জন্য আমি এখন আর কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি না। তারা ধীরে ধীরে বস্তু ও ক্ষমতালোভী হয়ে পড়ছে। তারা বিভ্রান্তিতে রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এ সময় তিনি শিক্ষা ও সংস্কৃতি উন্নয়নে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কবি শামীম রেজা, সাকিরা পারভীন, লাভলী বাশার, হামীম কামরুল হকসহ আরও অনেকে।

সারাবাংলা/টিএস/একে

গণমাধ্যম সংবাদমাধ্যম সারাবাংলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর