Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিআইসিএ’র সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি


১৬ জুন ২০১৯ ০২:৫৩

ঢাকা: মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের জন্য সিআইসিএ অংশীদারদের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শনিবার (১৫ জুন) তাজাকিস্তানের রাজধানী দুশানবের নাভরুজ প্রাসাদে কনফারেন্স অন ইন্টারএ্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার্স ইন এশিয়ার (সিআইসিএ) পঞ্চম সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি এ সহযোগিতা কামনা করেন।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। আমরা এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই, এজন্য তাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তবে এতে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে এই সংকট গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।’

রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘ভয়ঙ্কর গণহত্যা ও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার রোহিঙ্গা জনগণের জন্য বাংলাদেশ তার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। জাতিগত নিধন ও সীমাহীন মানবিক বিপর্যয়ের এই ভয়াবহ ঘটনা পাঠ্যবই নজির হিসেবে স্থান পেয়েছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় চাওয়ার পরে মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। আমরা সহিংস চরমপন্থী, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, জোরপূর্বক উদ্বাস্তু অভিবাসীদের সীমান্ত অতিক্রম করার মতো অনেক গুরুতর সমস্যার মোকাবিলা করছি। এ জন্য এসব ইস্যুও মোকবেলায় সাড়া দিতে সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘অনিয়মিত অভিবাসন, মাদকপাচার, আঞ্চলিক দাবি, জাতিগত সংঘাত, বিচ্ছিন্নতাবাদ, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং দৃশ্যমান জলবায়ু পরিবর্তন এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তা ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এশিয়ার শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদারে বহুজাতিক সংস্থা সিআইসিএ গঠিত হয়েছে। এই জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’

এ সময় এশিয়ার নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ইস্যু সমাধানে সিআইসিএ সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এশিয়ায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এগুলো অর্জন করতে পারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহীত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এ কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাদেশ সিআইসিএ লক্ষ্য ও মূলনীতি সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’

এ নীতি অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন গুরুত্ব দিয়ে সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। এই ক্ষেত্রে সিআইসিএ আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সিআইসিএ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এর প্রাতিষ্ঠানিক স্বক্ষমতা জোরদার, সম্পৃক্তকরণ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করছে। সিআইসিএ তৃতীয় দশকে পা রেখেছে।’ একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সহযোগিতামূলক নতুন এশিয়া বিনির্মাণে অংশীদার হতে বাংলাদেশ তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারবে বলে তিনি আশা করেন।

সম্মেলনে রিপাবলিক অব তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এমোমাইল রাহমানের সভাপতিত্ব অংশ নেন ৩৯টি দেশের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৯টি দেশের প্রেসিডেন্ট, ৩টি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কাতারের আমির। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চম সিআইসিএ সম্মেলনের প্রধান আয়োজন শুরু হয়। এ সম্মেলনের এবারের প্রতিবাদ্য বিষয় ছিল ‘একটি নিরাপদ ও অধিকতর সমৃদ্ধ সিআইসিএ অঞ্চলের জন্য অভিন্ন লক্ষ্য।’

সিআইসিএ হচ্ছে এশিয়ায় শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত বহুজাতিক ফোরাম। সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের হুমকি সমূলে উৎপাটন, অবৈধ মাদক উৎপাদন ও পাচার রোধ এবং এশিয়ার সমৃদ্ধি ও স্থিতিশলতার জন্য বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিও সিআইসিএ’র অন্যতম লক্ষ্য।

বর্তমানে সিআইসিএ’র ২৭টি সদস্য দেশ রয়েছে। এগুলো হলো চীন, রাশিয়া, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আজারবাইজান, বাহরাইন, কম্বোডিয়া, মিশর, ভারত, ইরান, ইরাক, ইসরাইল, জর্দান, কাজাখস্থান, কিরগিজস্থান, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, রিপাবলিক অব কোরিয়া, শ্রীলংকা, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকস্তান ও ভিয়েতনাম। এর আটটি পর্যবেক্ষক দেশও রয়েছে। এগুলো হল- বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, লাওস, মালয়েমিয়া, ফিলিপাইন, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম, অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ, লিগ অব আরব স্টেটস এবং পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি অব দ্য টার্কিক স্পিকিং কান্ট্রিজসহ পাঁচটি আন্তর্জাতিক সংগঠনও এর সাথে যুক্ত রয়েছে।

এশিয়ার ভূখণ্ড ও জনগণের প্রায় ৯০ শতাংশ সিআইসিএ’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অন্তর্ভুক্ত।

অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সচিব কামরুল আহসান ও রাষ্ট্রপতির সচিব সম্পদ বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর