আন্দোলন করছে করুক, আন্দোলন ভালো জিনিস: প্রধানমন্ত্রী
৮ জুলাই ২০১৯ ১৬:৫৮
ঢাকা: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর না করার পেছনে তিনবারের বিসিএস পরীক্ষায় পাসের হারের পরিসংখ্যান তুলে ধরে যুক্তি দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৮জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী চীন সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এরপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কিন্তু জন্ম নিবন্ধন হয়। বয়স আর লুকানো যায় না। একটা ছেলে-মেয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করে, যদি একটু দেরিও হয় তাহলেও ১৬ বছরে এসএসসি পাস করে। তারপর দুই বছরে এইচএসসি পাস করে। এরপর চার বছরে অনার্স। তারপর এক বছরে মাস্টার্স। তাহলে ১৮ যোগ ৪ সমান ২২ বছর, এরপর ২৩। তাহলে ২৩ এর মধ্যে মাস্টার্স ডিগ্রি কমপ্লিট হয়ে যায়। ২৩ বছরে চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে পিএসসিতে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য।
আমি হিসাব দিচ্ছি, দেশবাসীই ঠিক করবেন চাকরির বয়স বাড়ানো উচিত কি না। এই দাবির পরে আমি পিএসসি চেয়ারম্যানকে ডেকেছি, কথা বলেছি। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় পাসের হার তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী যারা। যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের পাসের হার হলো শতকরা ৪০ দশমিক ৭ ভাগ; ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়স যাদের তাদের মধ্যে ২৩ দশমিক ২৯ ভাগ; ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৩ দশমিক ১৭ ভাগ; আর ২৯ বছরের বেশি যাদের বয়স তাদের মধ্যে পাস করেছে ৩ দশমিক ৪৫ ভাগ।
৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় ২৩-২৫ বছর যাদের বয়স তাদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৪৫ ভাগ; ২৫-২৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৭৮ ভাগ; ২৭-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৪ দশমিক ৮৯ ভাগ এবং ২৯ বছরের বেশি বয়সীদের পাসের হার ৩ দশমিক ২৩ ভাগ।
৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় ২৩-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে পাস করেছে শতকরা ৪৩ দশমিক ৬৫ ভাগ; ২৫-২৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৩৫ ভাগ; ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭ দশমিক ২ ভাগ। ২৯ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে পাস করছে শূন্য দশমিক ৬১ ভাগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনটা গ্রহণ করবো বলেন এখন। আমি আর কিছু বলতে চাই না। আমি খালি পাসের হিসাবটা দিলাম। এখন যদি চাকরির বয়স ৩৫ বছর করা হয় তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়াবে, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলেন। কারণ তখন তো বিয়ে শাদি হবে, ছেলে-মেয়ে হবে। বউ সামলাতে হবে, ঘর সংসার সামলাতে হবে, ছেলে-মেয়ে সামলাতে হবে আর পরীক্ষা দিতে হবে। তখন তো আরও করুণ অবস্থা হয়ে যাবে। কাজ করবার তো একটা সময় থাকে, একটা এনার্জি থাকে।
এখন দাবি তোলার জন্য যদি দাবি তোলা হয়- আমার কিছু বলার নাই। কারণ এই দাবিটা তোলা বা এই আন্দোলনের জন্য নিশ্চয়ই কোনো না কোনো জায়গা থেকে তারা প্রেরণা পাচ্ছে। অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। কিন্তু তার পরিণতিটা কী দাঁড়াবে? আর ৩৫ বছরে পরীক্ষা দিলে এরপর পরীক্ষার রেজাল্ট, তারপর আরও দুই বছর ট্রেনিং। তাহলে ৩৭ বছর গেল। চাকরি বয়স ২৫ বছর না হলে কিন্তু পূর্ণ অবসর ভাতা পাবে না। যারা যুবক, যারা মেধাবী, যাদের কর্মক্ষমতা ভালো, তাদেরকে দিয়েই তো দেশের উন্নয়নের কাজটা করতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পার্লামেন্টে এটা একটা প্রস্তাব এসেছিল। ঠিক এই বিষয়গুলোই তখন বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর পালামেন্টের সেই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলে দিলো, কন্ঠভোটে পাস হলে কী হবে? তারা আন্দোলন করেই যাবে। তাহলে খুব ভাল কথা, করুক আন্দোলন। আমি তো আর আন্দোলনে বাধা দেবো না। আন্দোলন তো ভালো জিনিস। কারণ আন্দোলন করলে রাজনীতিটা শিখবে ভালোভাবে। কিন্তু যদি কারও প্ররোচনায় করে থাকে, তাহলে সেটা কী হবে, এটা বুঝতেই পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। আমি নিজেও ঢাবির ছাত্রী। এর একটা ঐতিহ্য ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছাড়া কিছু ছিল না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বেশি ছাত্র-ছাত্রী। একটা ক্লাসে কতজন বসতে পারে। সিট সংখ্যা ৪৫-৫০। সেখানে ৬০ জন্য বসতে পারতো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা প্রতিটি জেলায় জেলায় বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে দেখলাম কেউ বিজ্ঞান পড়ে না। ১২টি করে দিয়েছি। বিশ্বটাই হয়ে গেছে প্রতিযোগিতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সুনাম আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে গত ১ জুলাই বেইজিং যান প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে গত শনিবার (৬ জুলাই) তিনি দেশে ফেরেন।
চীন প্রথম সফরে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডালিয়ানে সামার ডাভোস নামে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং বৈঠক করেন ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে। এরপর ডালিয়ান থেকে বেইজিং পৌঁছান তিনি।
বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলে পৌঁছলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা, গার্ড অব অনার ও তোপধ্বনির মাধ্যমে উঞ্চ অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।
চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা ও একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জে সই করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে দেওয়া চীনের প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। এরপর বিকেলে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার ( ৫ জুলাই) দুপুরের পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কিত মিনিস্টার সান তাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিয়েন আন মেন স্কয়ারে চীনের জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি ঝাংসুর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে বেইজিংয়ের দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাইজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শি চিনপিংয়ের দেয়া নৈশভোজেও অংশ নেন তিনি।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এটি/একে
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দেবে চীন
‘রোহিঙ্গারা ফিরে না গেলে স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’
‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে’
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চীনের সমর্থন চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
চীন সফরে প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা সই
চীন সফর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শুরু
ভারতকে গ্যাস নিতে দিলে এলএনজি আমদানি করতে হতো না