Thursday 28 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনেক বড় উদারতা দেখিয়েছি, আর কত: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৩০

ঢাকা: বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এরা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করে? আমরা তাকে (খালেদা জিয়া) বাসায় থাকতে দিয়েছি, তাকে ইচ্ছামতো হাসপাতালে নিচ্ছে, চিকিৎসা করাছে, এটিই কি যথেষ্ট না? আমরা কি তাকে অনেক বড় উদারতা দেখাইনি? সেটিই তো দেখিয়েছি, আর কত?

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা এতদিন পরে একটা সুযোগ পেয়ে আন্দোলন করছে। খুব ভালো কথা, আন্দোলন করুক। কিন্তু আমার যতটুকু করার ছিল সেটি করেছি।’

২০০১ সালে বিদেশি ‘প্রভু রাষ্ট্রদের ষড়যন্ত্রের কারণে’ পুনরায় সরকার গঠন করতে না পারার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে আমি দাঁড়াই। আমি গ্যাস বিক্রি করব না। কিন্তু একই মিটিংয়ে আমি দেখেছি মুচলেকা দেয় খালেদা জিয়া। সে গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হয়। স্বাভাবিক ২০০১’এ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। ২০০১’এ নির্বাচনটা কেমন হয়েছিল তখন যেভাবে অত্যাচার আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর। কতজনের চোখ তুলেছে, হাত কেটেছে, মেয়েদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের দিন থেকে যে অত্যাচার শুরু হয়েছিল, সেই ভয়াবহ অত্যাচারের কথা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যায়নি।’

‘বিএনপি ক্ষমতার আসার পরে বাংলাদেশকে পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বাংলা ভাই, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে। ৬৩ জেলার বোমা হামলা করেছে। বাংলাদেশের যত অগ্রযাত্রা সব বন্ধ করেছে বলেও বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের বিভিন্ন অপকর্ম, সেই সঙ্গে দুর্নীতি দুঃশাসন।’

বিজ্ঞাপন

এক/এগারোর সময় যুবলীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। সেই এক/এগারোর সময় আমি যখন গ্রেফতার হয়েছি, যুবলীগ তখন মাঠে ছিল প্রতিবাদ করেছে। আমাদের প্রত্যেকেই কাজ করেছে সন্দেহ নাই। কিন্তু যুবলীগ দুঃসহ কাজ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে এদেশের কী অবস্থা ছিল? আজকে তার চিকিৎসার জন্য এত চেঁচামেচি করে বেড়াচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাদের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান যখন অসুস্থ, তাকে সিএমএইচে চিকিৎসা করতে দেয়নি। এমনকি তিনি যখন আইসিইউ’তে ভর্তি, তাকে স্ট্রেচারে করে কোর্টে নিয়ে হাজির করছে। তাকে জেনারেল পদ দেওয়া হয়েছিল সেটি বাতিল করেছিল। তার প্রমোশনও বিএনপি বাতিল করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই হলো খালেদা জিয়া। আর এরশাদকে তো কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল। তাকে কোনোদিন চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি। রওশন এরশাদকে দেয়নি। আবার জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় আমাদের সাজেদা চৌধুরীর অপারেশন হয়েছিল ঘা শুকায়নি, ব্যান্ডেজ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে জিয়াউর রহমান জেলে ভরেছিল। ঠিক একই অবস্থা মতিয়া চৌধুরীর। তাকেও জেলে দিয়েছিল।’

এরকম বহু অন্যায়-অবিচারের কথা এমনকি আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে যে অকথ্য অত্যাচার করেছে বাহাউদ্দিন নাছিম থেকে শুরু করে সাবের হোসেন চৌধুরী, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, শেখ সেলিমসহ বহু নেতাকে গ্রেফতার করে অকথ্য নির্যাতন করেছে। নাছিমকে তো এমন অত্যাচার করেছে, তাকে মৃত মনে করে তাড়াতাড়ি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে। আবার সেই অত্যাচারের ভিডিও নিয়ে খালেদা-তারেক জিয়া দেখে উৎফুল্ল হয়েছে। এই ধরনের হিংস্র একটা চরিত্র। আমরা দেখেছি। শুধু তাই না, খালেদা জিয়ার ছেলে কোকো যখন মারা গেল আমি গেলাম সহানুভূতি দেখাতে। আমি গাড়ি থেকে নেমে বেকুব, আমি আর ঢুকতে পারি না। আমি গেছি সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি দেখাতে আর তারা আমাকে অপমান করে ফেরত পাঠালো।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘…আমি বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করি, তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলে তারা যে সহযোগিতা চায়, খালেদা জিয়া কি আচরণ করেছে? ২১ শে আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা তার আগে খালেদা জিয়ার কি বক্তব্য ছিল? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। এই বক্তৃতায় তো খালেদা জিয়া দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আল্লাহর খেলা বোঝা বড় দায়। খালেদা জিয়াই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারেননি। এটি তার উপরেই ফলে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির মামলা তা তো আমাদের না। গ্যাটকোর কেস তার বিরুদ্ধে, নাইকোর কেস তার বিরুদ্ধে। আমেরিকার এফবিআই এটি খুঁজে বের করেছে। সিঙ্গাপুরে তার ছেলের দুর্নীতি বের করেছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাই বের করেছে। সেই কেসগুলি তো আছেই। সবচেয়ে বড় কথা এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই র টাকা এতিমদের হাতে কোনোদিন পৌঁছায়নি। সে টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছে, নিজেই খেয়েছে সে টাকা। খালেদা জিয়াই ভোগ করেছে এতিমের অর্থ। অথচ এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করো না-এ তো আমাদের কোরআন শরীফের নির্দেশ, নবী করিম (সা.) বলে গেছেন। আর সেই এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। কাজেই সেই সাজা পেয়েছে এবং সাজা সে ভোগ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া কারাগারে ছিল। খালেদা জিয়ার বড় বোন আর ভাই আমার কাছে এসেছে; বোন-বোনের স্বামী, ভাই ওরা এসেছিল। তারা আমাদের কাছে এলো। রেহানাও আমার সঙ্গে উপস্থিত ছিল। খালেদা জিয়ার স্বজনদের মানবিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজাটি স্থগিত করে বাসায় থাকা ও চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছি। আজকে দামি হাসপাতালে তার ব্যয়বহুল চিকিৎসা হচ্ছে। তার ছেলের বউ তো ডাক্তার। শুনেছি সে অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে। কই ছেলের বউ তো কোনোদিন এলো না। অবশ্য কোকোর বউ এসেছে। তারা তো আসেনি।’

খালেদা জিয়ার জন্মদিন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন হয় কী করে? কোথায় ৫ সেপ্টেম্বর, কোথাও ১৯ আগস্ট, আবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাওয়ার পরে হয়ে গেল ১৫ আগস্ট। ১৫ আগস্ট জন্মদিন করে কেক কেটে উৎসব করার অর্থটা কি? ওইদিন আমরা যারা বাবা-মা, ভাই, সন্তান হারিয়েছি তাদের মনে আঘাত করা, আমাদের মনে কষ্ট দেওয়া, আামাদেরকে কষ্ট দেওয়া, এটাই তো? এই কষ্টটা দেওয়ার জন্যই তো খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট তার জন্মদিবস পালন করে। তো আমার কাছ থেকে আর কত আশা করে তারা ? কিভাবে আশা করে সেটিই আমার প্রশ্ন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এ সব কথা আর বলতে চাই না। আমি বললাম ইচ্ছা করে। তার কারণ আমাদের যুবলীগের নেতাকর্মীদের জানতে হবে। কারণ নানা ধরনের কথা আসে। এদেশের মানুষ একটা অদ্ভুদ চরিত্রের তারা। আমি দেখি একটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে আবার দুর্নীতিবাজের জন্য আবার কান্নাকাটিও করবে। তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করতে হবে, যে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত। এই ধরনের দ্বৈত মানসিকতা কেন?’

আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে যুব সমাজের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

‘আমাদের দেশটা যেন গড়ে ওঠে। যেটা আমাদের যুবলীগ চেয়ারম্যান বললেন, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশলীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশীল বাংলাদেশ যেন গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে।’

‘২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা যে ঘোষণা দিয়েছিলাম সেটা অর্জন করেছি। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। আর এই উন্নয়নশীল দেশ থেকেই আমাদের যেতে হবে উন্নত দেশে। উন্নত দেশে যাওয়ার পরিকল্পনাও করে দিয়েছি। সেটা রূপকল্প-২০৪১, সেটা ধরে এগুলে পরে বাংলাদশকে আর পিছে ফিরতে হবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাবে, প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে-সেটাই আমরা চাই।

করোনাকালীন সময়ের মানুষের পাশে খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে সংগঠনের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন এবং গৃহহীন-অসহায় মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে সে বিষয়ে প্রশংসা করেন।

যুবলীগের পক্ষ থেকে সারাদেশে ৬১টি গৃহহীন পরিবারকে আজ ঘর উপহার দেওয়া হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ভাবেই মানুষের সেবা করা দরকার। কাজেই তরুণ সমাজ এগিয়ে আসলে মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে নিজের ভবিষ্যতকে যেমন দেশসেবায় নিয়োজিত করতে হবে তেমন নিজের ভবিষ্যতকে গড়ে তুলতে হবে এবং আগামী প্রজন্মও যেন সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে। সেইভাবেই আগামী প্রজন্মকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে উঠবে।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর