৪ কৌশলে সংরক্ষিত বনের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব
২৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৫৯
ঢাকা: বৈশ্বিকভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত বনের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে সংরক্ষিত বনের হার ১৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশে সংরক্ষিত বনের হার ১২ শতাংশ। প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে কাজ করলে বাংলাদেশে সংরক্ষিত বনের বৈশ্বিক এই ৩০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত অর্জন সম্ভব। এ পদ্ধতিটি সবচেয়ে টেকসই ও যুগযোপোগী। একইসঙ্গে চারটি কৌশল অবলম্বন করলে সংরক্ষিত বনের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘দ্য ইমপ্লিমেনটেশন অ্যান্ড মনিটরিং অব দ্য কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক: কমিউনিটি বেসড সলিউশন অ্যান্ড কন্ট্রিবিউশনস টু দ্য গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি টার্গেটস’ শীর্ষক এক কর্মশালায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এসব কথা বলেন। সুইডবায়ো, বন অধিদফতর, ফরেস্ট পিপল প্রোগ্রাম (এফপিপি) ও উন্নয়ন অন্বেষণের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘সুন্দরবনের জলাধার কমেছে। ২০১০ সালে যেখানে ছিল ৪৪৮ হেক্টর, ২০২০ সালে তা ৩২২ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। কাঁকড়া বিচরণস্থল তিন হাজার ১১৫ হেক্টরে থেকে কমে এক হাজার ৬৩৪ হেক্টরে এসে নেমে এসেছে। সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে সুন্দরবনের ১০ শতাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।’
তিন সেশনে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী সেশনে স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, বর্তমান যে প্রক্রিয়ায় বন সংরক্ষণ করা হচ্ছে সেই প্রক্রিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। কারণ পদ্ধতিটি খুব বেশি কাজে লাগেনি। আমরা কাজ করে দেখেছি, দেশের সংরক্ষিত বনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে বন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব, যেটা আমাদের ফ্রেমওয়ার্কে দেখিয়েছি। একে আমরা বলছি হিউম্যান ন্যাচার সোস্যালিটি অর্ক, এটাই হচ্ছে মূল জিনিস।
দ্বিতীয় কৌশলের অংশ হিসেবে লোকজ ও ঐতিহ্যগত জ্ঞান ব্যবহারের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি এরিয়ার দিকে যেতে হবে জানিয়ে আরও দুটি লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। বলেন, আমরা মাঠে কাজ করে দেখেয়েছি কীভাবে এসব কৌশল অবলম্বন করে বন সংরক্ষণ করা যায়। আমরা একটি নতুন সলিডারিটির মডেল তৈরি করেছি। একটি মডেল স্থানীয় গোষ্ঠীদের নিয়ে কয়রায়, আরেকটি আদিবাসীদের নিয়ে করেছি। এসব মডেলে তারা দেখিয়েছে কীভাবে বনভূমি পুনরায় স্থাপন করা যায়। কীভাবে লৌকিক জ্ঞানের মাধ্যমে মাছ ও মধু সংরক্ষণ করা যায়।
কর্মশালায় কি-নোট উপস্থাপন করেন এফপিপির সিনিয়র পলিসি উপদেষ্টা ড. মাওরিজিও ফারহান ফেরারি। বন সংরক্ষণের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে বক্তব্য দেন প্রধান বনসংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। আলোচনা শেষে সুন্দরবনের ওপর একটি আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
দ্বিতীয় সেশনে বক্তব্য দেন এফপিপির গ্লোবাল পার্টনারশিপ কো-অর্ডিনেটর ক্যারেলিন ডি ঝং এবং বন বিভাগের উপপ্রধান বনসংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির। সেশনের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘আমরা জাতীয় জীববৈচিত্র্য অভিযোজন পরিকল্পনা নিয়েছি। এ নিয়ে সব মানুষ চিন্তিত। বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রকৃতিনির্ভর সমাধান পেতে চান।’
এর আগে গত বছর মন্ট্রিয়লে কপ-১৫ সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সবাই মতৈক্যে পৌঁছায়। কুনমিং-মন্ট্রিয়েল গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক পাসের পর জাতিসংঘ-সমর্থিত কপ-১৫ নেতারা হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য ফ্রেমওয়ার্ক ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর এক–তৃতীয়াংশ রক্ষায় সবাই সম্মত হন। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভূমি ও জলভাগ সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত করা হয়। বর্তমানে ১৭ শতাংশ ভূমি ও ১০ শতাংশ সামুদ্রিক অঞ্চল সুরক্ষিত।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, সুন্দরবনের আয়তন কমার পাশাপাশি কমছে মৎস্যসম্পদও। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সমাধান খুঁজতে হবে। সুন্দরবনে পরিকল্পিতভাবে গোলপাতার গাছ রোপণ করে একে বাড়তে দিতে হবে। এখানকার জেলেরা যেন নিয়ম মেনে মাছ ধরেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের মাছ ধরা যাবে না। যে মাছগুলো বিপন্ন সেগুলো ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে হবে। আর জেলেদের জালের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিয়ম মেনে চলতে হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর