অতীতে বিচার ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজদের প্রটেকশন দিয়েছে : ড. সেলিম রায়হান
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:১২
ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সানেম’-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে গত ১৪-১৫ বছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ঋণ খেলাপির নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ছোট ছোট প্রকল্প থেকে মেগা প্রকল্পসহ সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতির ছায়া ছিল। আমরা দেখেছি যে, যিনি ঋণ খেলাপি, তিনিই কর খেলাপি, আবার তিনিই অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজ। অতীতে দেশের বিচার ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজদের প্রটেকশন দিয়েছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর শুক্রবার) রাজধানীর এফডিসি মিলনায়তনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনেক দুর্বলতা ছিলো। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন হোটেলে বসে সুদ হার নির্ধারণ করে দিতো। সেই সুদহারই বাংলাদেশ ব্যাংক মেনে নিতো। কিছু আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা মিলে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল। আমাদের এই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে হবে। আশা করি আর্থিক খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশিত হলে অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের নাম বেরিয়ে আসবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, এস আলম বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে সালিশি মামলার যে হুমকি দিয়েছে -তা নৈতিকতা বিবর্জিত। নিরাপদ দূরত্বে থেকে এসব কথা না বলে দেশে ফিরে এসে বললে ভালো হয়। শাস্তি প্রদানের জন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ব্যাংক ধসিয়ে দেয়ার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। তার এই হুমকিতে ভয় পাবার কোন কারণ নেই।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা। আমাদের রাজনীতি, ব্যবসা আর বিনিয়োগ একাকার হয়ে যাচ্ছে। যিনি ব্যবসায়ী, তিনিই বাণিজ্যমন্ত্রী, যিনি রাজনীতিবিদ তিনিই ব্যবসায়ী সমিতির নেতা। ফলে ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে এসে নিজেদের স্বার্থে নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে। জাতীয় সংসদ ও রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করানা গেলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। পোশাক কারখানার যে মালিক সংসদ সদস্য, তিনিই যদি শ্রমিকদের অধিকারের আইন প্রণয়নের সাথে যুক্ত থাকেন, তাহলে সেখানে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বাধা তৈরি হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এলডিসি’র গ্রাজুয়েশনের ফাঁদে পড়েছি। বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরোণের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, তা বাস্তবমুখী নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নই। শুধুমাত্র উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শুনিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নেয়া হচ্ছিল। কৃত্রিমভাবে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশকে স্বল্পন্নোত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিগণিত করা হবে ভুল সিদ্ধান্ত। তাই
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলডিসি’র গ্রাজুয়েশন নিয়ে বিগত সরকারের যে কর্মপরিকল্পনা ছিল তা ভালো করে পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে আশা করি।
অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট মোঃ আব্দুস সাত্তার সরকার, সাংবাদিক রিজভী নেওয়াজ, সাংবাদিক শাহ আলম খান, সাংবাদিক বাবু কামরুজ্জামান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
সারাবাংলা/আরএস