Thursday 15 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এখন তো আওয়ামী দোসররা নেই, ক্যাম্পাসে লাশ পড়ল কেন?’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ মে ২০২৫ ১৮:১০ | আপডেট: ১৫ মে ২০২৫ ২০:০৭

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী।

ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা সবাই একটু স্বস্তিতে থাকতে চেয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষক ছাত্ররা নির্বিঘ্নে ক্লাসে যাবে, ক্লাস থেকে বের হবে। এখন কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অরাজক পরিস্থিতি? এখন তো আর আওয়ামী দোসররা নেই, তাহলে এখন কেন ক্যাম্পাসে লাশ পড়বে?

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার বিচারের দাবিতে এ মানববন্ধন আয়োজন করে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম।

রিজভী বলেন, ‘আজকে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, ৭১ এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। অর্থাৎ দেশের পক্ষে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের জীবন চলে যায়। আমি এজন্যই বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।’

তিনি বলেন, ‘গত পরশু দিন রাত ১২টার সময় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। কী অন্যায় করেছিল সাম্য? আমার তো মনে হয় এখানে রাজনৈতিক কারণ আছে। তিনজন ভবঘুরে সাম্যকে কেন হত্যা করবে? কয়েকদিন আগে সে ফেইসবুকে শাহবাগে জাতীয় সঙ্গীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল। তার বিরুদ্ধে এবং জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে একটা পোস্ট করেছে। এটাই কি সেই কারণ?’

রিজভী বলেন, ‘আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়। আজকে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, ৭১ এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। অর্থাৎ দেশের পক্ষে, যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, যারা জাতীয় সঙ্গীত পক্ষে তাদের জীবন চলে যায়। আমি এজন্যই বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ভবঘুরেদেরকে গ্রেফতার করেছেন, মানুষ এসব বিষয় সহজভাবে নেয় না। মানুষ সহজভাবে নিত যদি, সবসময় সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিত। কিন্তু সেটা তারা নেয়নি। যেমন আবরার হত্যাকাণ্ডে নেননি, তেমনি আরও ঘটনাও নেননি। আজকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসিনা নেই, দোসররা নেই, রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে তফাজ্জল নামে একজনকেও হত্যা করা হয়েছে। ক্যাম্পাস হবে শান্তি, এখানে থাকবে শান্তির পতাকা। সেখানে কেন রক্তপাত হবে। এটা তো হওয়ার কথা নয়।’

রিজভী বলেন, ‘কালকে ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে গিয়েছে ছাত্র দলের নেতারা। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারা গেছে। আপনি বিরক্ত হয়েছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুই তোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদেরকে। আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তা দর্শন কী সেটা আমরা ইতিমধ্যে জেনে ফেলেছি। যারা জাতীয়তাবাদের পক্ষে ওখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ছাত্র সংগঠন করে সেটা আপনি পছন্দ করেন না। আপনার উচিত ছিল প্রথমে সেই লাশ দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ভাইস চ্যান্সেলররা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিশেষ দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই শান্তি বয়ে আনবে না।’

সরকারকে উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটা আমরা জানি না। আপনাদের আমরা সমর্থন করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, তখন তাদেরকে সাদরে বরণ করেন। তিন-চারদিন আগে দেখলাম আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে তারা গেলেন, তাদেরকে সাদরে বরণ করলেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেল, তখন আপনারা তাদেরকে উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ডগ্রেনেড। অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্বে আপনারা রয়েছেন। আপনারা তো সুশীল সমাজের লোক। কিন্তু, আপনাদের আচরণের মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন?’

রিজভী বলেন, ‘পুরোদেশ অশান্তিতে ভরে উঠেছে। অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। আপনারা সেদিকে না তাকিয়েই কি নিজেদের মত দেশ চালাবেন? কিন্তু ওই যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়ে পালিয়ে গেছে, তাদেরকে মদদ দেওয়ার অনেক শক্তি রয়েছে এবং যারা দিচ্ছে। সুতরাং ডানে-বামে সবদিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। না হলে কেউ রক্ষা পাবেন না। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা কোনো আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে আপনাদেরকে কিন্তু জনগণ ধরে ফেলবে।’’

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আতিকুর রহমান রুমন, মোকছেদুল মোমিন মিমুন, সাবেক ছাত্রনেতা মেহবুব মাসুম শান্ত,ওমর ফারুক কাওসার, ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আওয়ালসহ উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতারা।

সারাবাংলা/এজেড/এমপি

আওয়ামী দোসর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাম্য হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর