ঠাকুরগাঁও: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, দেশের মাঠের পরিস্থিতি এখন পালটে গেছে। প্রত্যন্ত এলাকায় জনগণ জুলুম ও অপকর্মকারীদের বয়কট করছে। যারা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে এবং সেবা দিচ্ছে, তাদের প্রতি জনগণের আগ্রহ বাড়ছে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হলরুমে এনসিপি ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, “প্রতিটি ভোট সেন্টারে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে আমাদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সরল প্রতিযোগিতা আর থাকবে না। বরং সম্ভাবনা বেশি যে, দ্বিতীয় শক্তিশালী দল প্রথম দুটি দলের মধ্যে কোন দল সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে তা নির্ধারণ করবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সংস্কারের পক্ষে থাকা দলগুলোকে নিয়ে আমরা একটি গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট গঠন করেছি। আশা করছি, আরও একাধিক দল যুক্ত হয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করবে।’
সারজিস আলম বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই ঠাকুরগাঁও জেলার সব উপজেলাসহ প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করব। সবাইকে এরইমধ্যেই এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রত্যাশা বাস্তবায়নের জন্য সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। এনসিপি একটি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মভিত্তিক বা নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক দল জনগণের উপর তাদের আদর্শ চাপিয়ে দেয়, মানুষ তা থেকে বিমুখ হবে। আমরা সংস্কারের পক্ষে এবং আধিপত্যবাদের বিপক্ষে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে দাঁড়াবো এবং জনগণের প্রতিনিধি হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
সারজিস আলম আরও উল্লেখ করেন, ‘মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কিছু ভয় আছে। কেউ নীতি-নৈতিকতার পথে থাকলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কিছু রাজনৈতিক দল এখনও পুরনো মানসিকতা ছাড়তে পারেনি, ক্ষমতায় গেলে তারা কালো টাকার খেলা দেখাবে এবং প্রশাসনকে নিজেদের মতো ব্যবহার করবে, যা কাম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তাতে এনসিপির কোনো দ্বিমত নেই। আমরা চাই নির্বাচন লেভেল প্লেইং ফিল্ডে অনুষ্ঠিত হোক।’
পুলিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গায় পুলিশের কিছু সদস্য এখনও টাকা লেনদেনে জড়িত। টাকার কারণে অপরাধী ছাড়া হয় এবং নিরপরাধীকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট অভিযোগ জানিয়েছি। যেকোনো কর্মকর্তা যদি দলীয় নেতাকর্মী হিসেবে কাজ করে, তার ব্যবস্থা নেব।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ১ বছর ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি দেশে আসেননি। তবে আমরা মনে করি, তিনি দেশে আসলে তার জন্য কোনো সমস্যা হবে না। অন্যান্য দলগুলো সুন্দর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করবে। কেউ যদি অপ্রত্যাশিত বা ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করে, ফ্যাসিস্ট বিরোধী দল তা সুযোগ দেবে না।’
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম মূখ্য সমন্বয়ক কৃষিবিদ গোলাম মর্তুজা সেলিম, ঠাকুরগাঁও জেলা এনসিপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম, সদস্য সচিব খলিলুর রহমানসহ অন্যান্যরা।