চট্টগ্রাম ব্যুরো: দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় পত্রিকা দুটির নিরীহ কোনো সমালোচনাকারীকে গ্রেফতার-হয়রানি না করার আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি আকারে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
বিজ্ঞপ্তিতে আমির ও মহাসচিবের ‘কড়া বিবৃতি’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘আমরা আগেও বলেছি, মার্কিন ওয়ার অন টেরর-এর সিপাহী ও ভারতপন্থী হিসেবে সমালোচিত ও নিন্দিত প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা সহিংস হওয়া আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু পত্রিকা দুটিতে হামলার অভিযোগে কোনো নিরীহ সমালোচনাকারীকে গ্রেফতার কিংবা তুলে নিয়ে হয়রানি বা নির্যাতন করা যাবে না। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে যারা নিরীহ সমালোচনাকারী তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় ভারতপন্থী পত্রিকা দুটির ওপর বাংলাদেশপন্থী ছাত্র-জনতার ক্ষোভ বাড়বে বৈ কমবে না।’
‘এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শুধু একজনের পরিচয়ে তার প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা মাদরাসার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শয়তানির আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।‘
প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হলে প্রথম আলো সেটির ন্যায্যতা উৎপাদনে সম্পাদকীয় ছাপিয়েছিল। ২০১৩ সালে শাহবাগের ফ্যাসিবাদের পক্ষে দালালি করা পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমান সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াকে চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন। সম্ভবত সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে তার পত্রিকা ওয়ান ইলেভেনের মতো গণবিরোধী ফ্রেমিং ও বয়ান প্রতিষ্ঠা করতে এখন ব্যর্থ হচ্ছে।’
‘কৌতুকের বিষয়, ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই ডেইলি স্টারে এক কলামে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে দমনে পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে সহায়তা করতে উদগ্রীব সম্পাদক মাহফুজ আনাম আজ কোনো কোনো জুলাই নায়কের কমরেড বনে গেছেন। নিকট অতীতে দিগন্ত টিভি বন্ধ করে শত শত সাংবাদিককে নিমিষে বেকার করে দেওয়া হয়েছিল। সংগ্রাম পত্রিকার অফিস ভাঙচুর করে প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকে লাঞ্ছিত করে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নয়াদিগন্তের অফিসে আগুন লাগানো হয়েছিল। সেসময় সুশীল নাগরিক সমাজ প্রতিবাদে রাস্তায় নামলে আজকে তারা নৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতেন না।’
তারা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গি ন্যারেটিভের গডফাদার প্রথম আলো। আর তার দোসর ডেইলি স্টার সেসব ন্যারেটিভ বিদেশিদের গলধঃকরণ করিয়েছে। এভাবে পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে এ দেশের অগণিত আলেম, মাদরাসা ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ তরুণকে জঙ্গিবাদের তকমা দিয়ে জেল-জুলুমের সম্মতি উৎপাদন করা হয়েছিল। এর দায় পত্রিকা দুটি কখনো এড়াতে পারে না।’
‘ওয়ান ইলেভেনের সময় পত্রিকা দুটির গণবিরোধী ভূমিকা আজও আমাদের জন্য সতর্কতা। প্রথম আলো-ডেইলি স্টার নিছক গণমাধ্যম নয়, বরং এ দেশে দিল্লির সাউথ ব্লকের এজেন্ডা ও বিশেষ মতাদর্শিক রাজনীতির ফুটসোলজার হিসেবে ভাড়ায় খাটা প্রতিষ্ঠান। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশপন্থী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জারি থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
উল্লেখ্য, গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার কারওয়ানবাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। প্রথম আলো এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, হত্যাচেষ্টাসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে তেজগাঁও থানায় মামলা করেছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ২৮ জনকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ।