Monday 29 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমাধি থেকে শাহবাগ মোড়
মোনাজাত-স্লোগানে শহিদ হাদি হত্যার বিচার দাবি

কানজুল কারাম কৌষিক, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১২

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশ ঘেঁষে শাহবাগের পথে ইদানিং নিয়মিতই চোখে পড়ে জনতার ভিড়। নারী, পুরুষ, শিশুসহ অনেকেই থাকেন এ ভিড়ে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি সীমানার পাশে দাঁড়িয়ে তারা দেখছেন, শহিদ শরিফ ওসমান হাদির কবর। কেউ কেউ আবার কবর জিয়ারত করছেন। সেই জিয়ারতের মোনাজাত থেকে শুরু করে ইনকিলাব মঞ্চের অবরোধ কর্মসূচির স্লোগানে একটি দাবিই বারবার উত্থাপিত হচ্ছে- হাদি হত্যার বিচার চাই।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে এসব চিত্র। কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিদের অনেকেই প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন হত্যাকারীর বিচার চেয়ে। কেউ কেউ দু’হাত তুলে মোনাজাত করছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে, কেউ আবার কাঁদছেন, কেউ কেবল তাকিয়েই আছেন দীর্ঘক্ষণ। যেন প্রিয় ওসমান হাদির সঙ্গে দাঁড়ানোর মনোবাসনা পূরণ করছেন।

বিজ্ঞাপন

কবরসংলগ্ন ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রাঙ্গণে কথা হলো আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়ামের সঙ্গে। বাবার সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে। সারাবাংলাকে সিয়াম বলে, ‘দেশের একজন বিপ্লবী শরিফ ওসমান হাদি। তার জীবদ্দশায় আমরা তার অনুসারী ছিলাম। তার কবর জিয়ারত করে আমরা সেই পথেই দেশকে সেবা দিতে চাই।’

এদিকে কিছুটা এগিয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে অবরোধ ডেকেছে ইনকিলাব মঞ্চ। রোববার দুপুর ২টা থেকে তারা শাহবাগ অবরোধ করে রেখেছেন। তারা এই জায়গাটার নাম দিয়েছেন ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’। সরেজমিনে দেখা যায়, ইনকিলাব মঞ্চের এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেকেই সেই চত্বরে এসেছেন। এ সময় তারা ‘তুমি কে, আমি কে- হাদি হাদি’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’সহ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন।’

রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন আশরাফুল। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বাসায় থেকে গেছি পরীক্ষার পর। হাদি ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা আছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে আসা এক ব্যাবসায়ী মোহাম্মদ ফায়জুল্লাহ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইনকিলাব মঞ্চ শহিদ ওসমান হাদির একটি স্বপ্ন। এই স্বপ্ন যিনি দেখেছেন, তার বিচারই যদি এ মঞ্চ বাস্তবায়ন করতে জোড় না দিতে পারে, তাহলে এটি অসফল রয়ে যাবে। আমরা এই মঞ্চকে সামনে নিয়ে যেতে কর্মসূচি সফল করতে চাই।’

এ ছাড়াও, প্রতিদিনই হাজারো জনতা শহিদ হাদির কবর জিয়ারত করছেন। অনেকেই কিছুক্ষণ বসে দেখে যাচ্ছেন হাদির কবর। এর পর সেখান থেকে অনেকেই শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। এর আগে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শাহবাগে দেখা করতে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার এস এম সাজ্জাত আলী এবং তথ্য ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

কমিশনার সাজ্জাত আলী আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে হাদি হত্যার চার্জশিট দাখিলের কথা জানান। আসামি যদি ভারতে পালিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তাকে পাওয়া গেলে ভারত ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করবে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা।

একইদিন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বেশ কড়া ভাষায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারকে হাদি হত্যার বিচার ও ইনকিলাব মঞ্চের বিষয়ে বিভিন্ন হুঁশিয়ারি দেন। উপদেষ্টা এবং ডিএমপি কমিশনার শাহবাগে আসার পরও ইনকিলাব মঞ্চ ৩ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল ও ২৬ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্নের দাবি জানায়। সেইসঙ্গে রোববার দেশের আট বিভাগে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

অপর দিকে রোববার সংবাদ সম্মেলনে হাদি হত্যার দুই আসামি ভারতে পালিয়েছেন বলে জানায় ডিএমপি। তাদের পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে পূর্তি ও সামী নামের দুজনকে গ্রেফতারর করা হয়েছে বলেও জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এদিকে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ঘোষণায় ওসমান বিন হাদি হত্যার বিচার ২৪ দিনের মধ্যে শেষ করাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর