গণসংবর্ধনায় ঐক্যবদ্ধ শক্তির মহড়ার প্রস্তুতি আ.লীগে
২০ জুলাই ২০১৮ ২২:২২
।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের কয়েকমাস আগে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ শক্তির মহড়া দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি লোকসমাগম ঘটিয়ে গণসংবর্ধনাকে জনসমুদ্রে রূপ দেওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি।
শনিবার (২১ জুলাই) বিকেলে তিনটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (২০ জুলাই) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনাস্থলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও শেখ হাসিনার শৈশব থেকে বর্তমান পর্যন্ত চিত্র প্রদর্শনীর স্টল উদ্ধোধন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খুব সংক্ষিপ্ত একটা অনুষ্ঠান হবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আমরা দলের পক্ষ থেকে একটি অভিনন্দন পত্র পাঠ করবো। এছাড়া আর তেমন কোনো কিছু হবে না।’
অনুষ্ঠানস্থলে শেখ হাসিনার লেখা বইগুলো নিয়েও একটি বুক স্টল শোভা পাবে। সন্ধ্যা থেকে সর্বস্তরের জনগণের জন্য চিত্র প্রদর্শনী এবং বুক স্টল উন্মুক্ত থাকবে। শিল্পী হাশেম খানের নেতৃত্বে নবীন শিল্পীরা এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের গণসংবর্ধনায় উপস্থিত হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
এবিষয়ে কাদের বলেন, “সজীব ওয়াজেদ জয় আজ দেশে ফিরেছেন। আমি আমন্ত্রণ করেছি। তিনি আমাকে ‘ইয়েস’ বলেছেন। তিনি (জয়) বলেছেন, নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলাপ করে জানাবেন। আমরা আশা করছি, সজীব ওয়াজেদ জয়ও এখানে থাকবেন।”
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার উন্নয়ন, অর্জন ও সাফল্যগুলো তুলে ধরে গণসংবর্ধনা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে স্বাধীনতা-সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতির পিতার কন্যাকে আমরা সংবর্ধনা দিচ্ছি। আমরা নেত্রীর অর্জন সেটাকে তুলে ধরতে চাই। সেজন্য নেত্রীকে সংবর্ধনা দিচ্ছি।’
গত ১৯ জুন দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২১ জুলাই বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন ও ভারতের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে এই সংবর্ধনা দেবে আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষে রাজধানী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীদের সংবর্ধনায় যোগ দেবে। বাস, ট্রাক ও রেলপথে নেতাকর্মী ঢাকায় এসে বর্ণিল মিছিল সহকারে সোহরাওয়ার্দীও ময়দানে সমবেত হবে। সংবর্ধনাকে ঘিরে জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও শোডাউন সহকারে সমাবেশে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) গণসংবর্ধনার প্রস্তুতি পরিদর্শন এসেওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচে বড় গণসংবর্ধনা হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা, রাষ্ট্রনায়ক, দেশরত্ন শেখ হাসিনার সংবর্ধনা জনতার সমুদ্রে পরিণত হবে। সারাদেশের সব শাখাকে আমরা আমন্ত্রণ করিনি। তারপরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতাকর্মী আসবে।’
গণসংবর্ধনা সফল করতে এরইমধ্যে বিভিন্ন যৌথ ও বর্ধিত সভা করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। সব প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে।
জনসভাস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার বিভিন্ন সড়কের রোড ডিভাইডার, ওভারব্রিজগুলো শেখ হাসিনার রঙিন ছবি, অর্জন, সাফল্য সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে প্যান্ডেলের একদিকে ২০ হাজার, আরেকদিকে ১০ হাজারসহ মোট ৩০ হাজার আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরেও গোটা উদ্যানজুড়ে কয়েক লাখ লোক সংবর্ধনায় অংশ নিতে পারবেন।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নেতৃত্বে মঞ্চ, মাঠ ও আশপাশের সাজসজ্জা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলীয়ভাবে সমাবেশে সার্বিক শৃঙ্খলার তত্ত্বাবধানে থাকবে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সংবর্ধনা ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। এদিন যুবলীগ দক্ষিণের ২৬ হাজার নেতাকর্মী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।
শুক্রবার (২০ জুলাই) ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আগামীকালের গণসংবর্ধনা ঐতিহাসিক সংবর্ধনা হবে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু সংবর্ধনার জন্য নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এদেশের জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই এ সংবর্ধনা হবে।’
হানিফ আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা শুরু করেছিলেন। মাত্র সাড়ে নয় বছরে অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া দেশকে আলোয় উদ্ভাসিত একটি উজ্জ্বল দেশে রূপান্তর করেছেন। এটা একটা অবিস্মরণীয় অর্জন।’
একই সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আগামীকালের সংবর্ধনা জনসমুদ্রে রূপান্তরিত হবে। এই গণসংবর্ধনার রেশ আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের সমাবেশ, বন্ধ থাকবে যেসব রাস্তা
সারাবাংলা/এনআর/এমও