মনসুর-মোকাব্বিরের ব্যাপারে স্পিকারকে এখনই চিঠি নয়
৫ এপ্রিল ২০১৯ ২১:০১
ঢাকা: দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ গ্রহণ করায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খানের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেবে গণফোরাম, তবে তা এখনই নয়।
গত ৭ মার্চ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ গ্রহণ করার পর গণফোরাম চিঠির একটি খসড়া তৈরি করে। সেই খসড়ার একটি কপি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছেও পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, মৌলভীবাজার -২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর গণফোরামের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। সঙ্গত কারণেই, তার বিরুদ্ধে গণফোরাম ও বিএনপি যৌথভাবে অভিযোগ দায়ের করার এখতিয়ার রাখে বলে মনে করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
কিন্তু প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের জন্য স্পিকারকে চিঠি দেয়নি গণফোরাম। এরই মধ্যে দলটির আরেক সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানও গত ১ এপ্রিল সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সুলতান মনসুর ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করলেও অবশ্য মোকাব্বির গণফোরামের প্রতীক নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দলের দুই সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও গণফোরামের শীর্ষ নেতাদের বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত বিএনপির ছয় জন সংসদ সদস্যও শপথ নেবেন। তখন আর সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খানের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের জন্য স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তাই আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় গণফোরাম। এই সময়ের মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ না নিলে স্পিকারকে চিঠি দেবে তারা।
অবশ্য গণফোরামের দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্য— দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়ায় এরই মধ্যে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে দল থেকে। মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধেও খুব শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু তাদের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়টি বড় ধরনের একটি লিগ্যাল ইস্যু। নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য পার্লামেন্টে ঢুকে ফ্লোর ক্রোস করলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে এবং কেউ যদি দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন, তাহলেও তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে তার সংসদ সদস্য বাতিল হবে কি না— সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধি নেই। অথবা দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করা হলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে কি না— সে বিষয়েও সংবিধানে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য নেই।
তাছাড়া গণফোরাম নেতাদের বিশ্বাস, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান সরকার পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেই শপথ নিয়েছেন। তাদের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের জন্য স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হলে সে চিঠির ফায়সালা হতে হতে পাঁচ বছর, অর্থাৎ সংসদের মেয়াদই শেষ হয়ে যাবে। সরকার যদি তাদের দু’জনকে সংসদে রেখে দিতে চায়, তাহলে কারও কিছু করার থাকবে না।
সে কারণেই বিএনপির ছয় সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত দেখতে চায় গণফোরাম। বিএনপির ছয় জন শপথ নিয়ে সংসদে গেলে স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন হবে না। বরং বহিষ্কার আদেশ তুলে নিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে দলে ফিরিয়ে নেবে গণফোরাম। মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারও সংসদ সদস্য পিদ বাতিল চেয়ে স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার জন্য কোনো টাইম ফ্রেম নেই। যেকোনো সময় চিঠি দেওয়া যেতে পারে। আমরা চিঠি দেবো। কিন্তু সেটা কবে দেবো, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দ্রুত-ই হবে।’
উল্লেখ্য, কারও সংসদ সদস্য পদ শূন্য হওয়ার বিষয়ে সংবিধানের ৬৭(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে যদি নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তিনি তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত শপথগ্রহণ বা ঘোষণা করতে ও শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে সই দিতে অসমর্থ হন। তবে শর্ত থাকে যে, এই মেয়াদ পার হওয়ার আগে স্পিকার উপযুক্ত কারণে তার শপথ নেওয়ার সময় বাড়িয়ে দিতে পারবেন।
এছাড়া সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি (ক) ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা (খ) সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খানের বিষয়টি সংবিধানের ৬৭ (১) ও ৭০ অনুচ্ছেদ— কোনোটির মধ্যেই পড়ে না। তারা দু’জনই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ নিয়েছেন, তারা ফ্লোর ক্রোস করেননি। এমনি নিজেদের দল থেকে পদত্যাগও করেননি।
তাছাড়া দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলে তার ব্যাপারে সংসদ বা নির্বাচন কমিশনের করণীয় সম্পর্কে কোনো অতীত উদাহরণও বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় নেই। এর আগে বিএনপির দু’জন সংসদ সদস্য তৎকালীন সরকারি দল আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ায় তাদের সংসদ সদস্য পদ শূন্য হয়েছিল। অর্থাৎ তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের দল ত্যাগ করেছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর