তৃণমূলে ৩ লক্ষ্যে কাউন্সিলমুখী হচ্ছে আওয়ামী লীগ
১৭ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৪৬
ঢাকা: আগামী অক্টোবরে দলের ২১তম কাউন্সিল সামনে রেখে তোড়জোড় শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। কাউন্সিলের জন্য তৃণমূল আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত করতে আট বিভাগের জন্য গঠন করা হয়েছে সাংগঠনিক টিম। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের যৌথ সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত নির্দেশনা নিয়ে মাঠে নামবে দলগুলো।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মাঠে তিন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে এসব সাংগঠনিক দল। তাদের মূল লক্ষ্য তৃণমূলকে জাতীয় সম্মেলনমুখী করার জন্য বিভিন্ন ইউনিটের কাউন্সিল করে নতুন কমিটি গঠন। পাশাপাশি ২০২০ সালে মুজিববর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে প্রতিটি ইউনিটকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্য থাকবে দলটির।
বিভাগীয় সাংগঠনিক দলগুলোর তৃণমূল সফরে দলের কার্যক্রমকে গতিশীল ও বেগবান করার লক্ষ্যের কথা জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু। এবারে তৃণমূলের নেতৃত্ব বাছাইয়ে ‘সরাসরি ভোট’ না ‘সিলেকশনকে’ গুরুত্ব দেবেন— জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবসময় ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করি। কোথাও কোনো ঝামেলা হলে সেক্ষেত্রে সমঝোতা করে নেতৃত্ব নির্বাচন করি, এবারও সেটাই হবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনায় তৃণমূল থেকে সংগঠনকে জাতীয় সম্মেলনমুখী করার লক্ষ্যে আমাদের আটটি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম মাঠে নামছে। জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিটে কাউন্সিল করে জাতীয় সম্মেলনমুখী করার পাশাপাশি ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে কেন্দ্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচিগুলো উদযাপনের ব্যাপারেও আহ্বান জানানো হবে। এ ব্যাপারে দলীয় সভাপতি আগামী যৌথসভায় আমাদের চূড়ান্ত দিক-নিদের্শনা দেবেন।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে অক্টোবরে। কিন্তু সারাদেশে জেলা, উপজেলা, থানা বা পৌরসভা পর্যায়ের বেশিরভাগ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই এসব ইউনিটের নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্র থেকে।
তৃণমূল ইউনিটগুলোতে কাউন্সিল করতে আট বিভাগীয় সাংগঠনিক দলগুলোতে থাকছেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা। প্রতিটি টিম সমন্বয় করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এরই মধ্যে দলে অন্তর্ভুক্ত নেতাদের মৌখিকভাবে এ বিষয় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কী কী লক্ষ্য নিয়ে সাংগঠনিক সফরে মাঠে নামছেন— জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের লক্ষ্য সংগঠন গোছানো। সংগঠনকে গতিশীল ও বেগবান করে জাতীয় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা। পাশাপাশি আগামী বছর মুজিববর্ষ পালন করা হবে। এ উপলক্ষে থাকবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। তৃণমূলের ইউনিটগুলো যেন এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি গ্রহণ করে, সে বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল রংপুরের গঙ্গাচড়া ও তারাগঞ্জ উপজেলার কাউন্সিল হবে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আমি উপস্থিত থাকব। একইভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির জন্যই আমরা কাউন্সিল করব। সেগুলোর তারিখও ঠিক করা হয়েছে। ১৯ এপ্রিল দলের যৌথ সভায় নেত্রী যে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।
আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সারাবাংলাকে বলেন, কেন্দ্রের কাউন্সিলের আগেই তৃণমূলের কাউন্সিলের কাজ শেষ করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর জায়গায় নতুন কমিটি করতে আট বিভাগের জন্য আটটি সাংগঠনিক টিম করা হয়েছে। এই টিমগুলোর নেতারা সমন্বয় করে কাজ করবেন।
বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, আমরা মাঠে নেমেই আছি। কোনো তারিখ বা দিনক্ষণ দিয়ে মাঠে নামার কোনো বিষয় নয়। তবে যেহেতু যৌথ সভার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই যৌথ সভার নির্দেশনাগুলোর প্রতি গুরুত্ব থাকবে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, তৃণমূলের চার থেকে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে যেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে, সেগুলোতে সম্মেলন করতে বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের এসব কমিটিগুলো গঠন-পুনর্গঠন শেষে সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় সম্মেলনের কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি দৃশ্যমান হবে। ওই সময় সম্মেলন আয়োজনে গঠন করা হবে আটটি সম্মেলন প্রস্তুত উপকমিটি। আগামী সম্মেলনে দল ও সরকার আলাদা করার বিষয়ে ব্যাপক চমক থাকবে বলেও মনে করছেন নেতারা।
এর আগে. গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দায়িত্বপপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সম্মেলনের জন্য মার্চ মাস থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাদের বলেন, বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মের জন্য সংগঠনকে আরও জনপ্রিয় ও শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নিতে চাই। আগামী মার্চ থেকে সংগঠনের সম্মেলন উপলক্ষে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি চাই, যথা সময়ে সম্মেলন হোক।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পরই তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত বৈঠক করতে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিভিন্ন এলাকার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির তালিকা তৈরি করেন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা।
সর্বশেষ ৫ এপ্রিল বিকেলেও গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি জানান, আগামী জাতীয় সম্মেলন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। তার জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি। ওই বৈঠকে দলের যুগ্ম সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিভাগওয়ারী উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিটের সর্বশেষ কাউন্সিলের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এর আগে, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশে (আইইবি) অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ফের আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আর সাধারণ সম্পাদক পতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর