Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হতাশ-ক্ষুব্ধ-বিব্রত নেতারা, ১০ ঘণ্টায়ও নেই বিএনপি’র প্রতিক্রিয়া


২৫ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৪৩

ঢাকা:  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিজয়ী প্রার্থী মো. জাহিদুর রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তারা বলেছেন, বিষয়টি তাদের বিব্রত করেছে।

এদিকে ২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জাহিদুর রহমান তার শপথ নেওয়ার পর এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় দশ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

বিজ্ঞাপন

তবে নানামুখী রাজনৈতিক সংকটে থাকা দলটির শীর্ষ নেতারা যখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছেন, ঠিক তখন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত একজন প্রার্থীর শপথ গ্রহণে অনেকটাই বাকরুদ্ধ তারা।

‘নো কমেন্ট, নো কমেন্ট’ সারাবাংলার প্রশ্নে ঠিক এমনটাই বলেছেন একাধিক শীর্ষ নেতা।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত পাঁচ জন সদস্যের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলা.নেট’র এই প্রতিবেদকের। তাদের প্রত্যেকেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে দুপুর নাগাদ খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর আরেক দফা কথা হয় তাদের সঙ্গে। তাতে প্রায় সবাই হতাশার কথা জানান। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। একাধিক জন বলেছেন তারা বিব্রত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফল বর্জন এবং শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্তেই তারা অনঢ় থাকতে পারবেন। এমনকি স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকেও (২২ এপ্রিল) তাদের সে সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এবং দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ শপথ নেওয়ার কথা ভাববেন না বলেও ধারণা ছিল শীর্ষ নেতাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এরই মধ্যে একজন শপথ নিয়ে নেওয়ায় সে হিসাবে গরমিল হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে ও নির্বাচনে জয়ী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া নির্বাচিত পাঁচ প্রার্থীই শপথের বিষয়ে শুরু থেকেই ছিলেন উদগ্রীব। সে কারণেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মো. মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত উকিল আব্দুস সাত্তার ১৫ এপ্রিল থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় সবাই সারাবাংলাকে বলেছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে অস্থিরতায় রয়েছেন। দল থেকে তাদের স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের। এমনকি তাদের সঙ্গে নিয়ে একটি বৈঠকেও বসেনি দলের শীর্ষ পর্ষদ।

বিশেষ করে গত ২২ এপ্রিল রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া নির্বাচিতদের কেউ ছিলেন না।

সূত্র মতে, কথা ছিল এই সিদ্ধান্তের কথা বিজয়ী প্রার্থীদের বাকি পাঁচজনকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি। বিজয়ী পাঁচ প্রার্থী ঢাকায় অবস্থান করলেও তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি।

একজন বিজয়ী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে ‘শেষ কথা’টি জানিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেননি শীর্ষ নেতারা।

ঠিক এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে দলের কাউকে কিছু না জানিয়ে শপথ গ্রহণের জন্য সংসদে যান মো. জাহিদুর রহমান। দুপুর ১২ টার মধ্যে তার শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের একজন বিজয়ী প্রার্থী শপথ গ্রহণের পরপরই বিএনপির উচিত ছিল আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পারতেন ঘটনার পরপরই এই নেতার বিষয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে।

কেউ কেউ এমনও বলেছেন, প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলনে অভ্যস্ত দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদও পারতেন এ ব্যাপারে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে।

বৃহস্পতিবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কেবল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেছেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা শপথ নিচ্ছেন অথবা নিতে চাচ্ছেন, তারা গণদুশমন। জনগণের থু থুতে তারা ভেসে যাবে।’

দলীয় প্রার্থীর শপথ গ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার নই। কেউ যদি শপথ নিয়ে থাকেন, সে ব্যাপারে দলের মুখপাত্র হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলবেন।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আই হ্যাভ নো কমেন্ট। এ ব্যাপারেই আমি কিছুই বলব না।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শপথের বিষয়টি আমি জানি না। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। বিষয়টি সম্পর্কে জেনে তারপর কথা বলব।’

তবে বারবার ফোন দিয়েও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পাওয়া যায়নি। তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি খুবই অসুস্থ। আর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করা রুহুল কবির রিজভী পুরো দিন ছিলেন নীরব।

সংসদে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিই প্রথম অঙ্গীকার এমপি জাহিদের

সারাবাংলা/এজেড/এমএম

এমপি জাহিদুর রহমান প্রতিক্রিয়া বিএনপি শপথ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর