Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট জনবান্ধব নয়: বিএনপি


১৪ জুন ২০১৯ ১৭:৩৬

ঢাকা: জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট জনবান্ধব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১৪ ‍জুন) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাজেট নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক কথায় এটি জনবান্ধব বাজেট নয়। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এ বাজেট থেকে সাধারণ মানুষ কিছুই পাবে না। বরং তাদের ওপর করের বোঝা বাড়বে।’

সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ- সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’— ঘোষিত বাজেটের এই শিরোনাম সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘বর্তমান অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দেওয়ালে লেখা দেখা গেছে, ‘সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের।’’

‘আসলে সময় এখন তাহাদের এবং একমাত্র তাহাদেরই। সেটা বুঝতে বাংলাদেশের মানুষের বুঝতে আর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘বাজেটের শিরোনাম থেকেই উন্নয়নের গীত প্রকৃষ্ট হয়েছে। কিন্তু এই তথাকথিত উন্নয়নের গীত আর মানুষ শুনতে চায় না। কর আর দ্রব্যমূল্যের চাপে ভোক্তা সাধারণের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। আয় বৈষম্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে জনগণ এখন সামাজিক অস্থিরতার মুখোমুখি। তারা এরখন আর উন্নয়নের মিষ্টি কথায় সন্তুষ্ট হতে পারছে না।’

বিজ্ঞাপন

উত্থাপিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাজেটের আকার বড় করে চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেট বৃদ্ধির এই প্রগলভতা বছর শেষে চুপসে যেতে দেখা যায়। বাজেটের আকার কত বড়, এ নিয়ে আর জনগণের মধ্যে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। কারণ, প্রতিবছর সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ যেভাবে কাট-ছাঁট করা হয়, তাতে বিরাটাকার বাজেটের অন্তঃসারশূন্যতাই প্রকাশ পায়।’

আগামী অর্থ বছরের বাজেটে বিপুল অংকের ব্যয়ের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সরকারের আয়ের সামর্থ কমে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থ বছরে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টানা নির্ধারণ করা হয়। যদিও চলতি অর্থ বছরে এনবিআর আদায় করতে পেরেছে ১ লাখা ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩ মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা কীভাবে আদায় হবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।’

বাজেটের পরিকল্পনা, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, খাতভিত্তিক বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ অত্যধিক। প্রতি বছরই বাজেটে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। বাজেট বাস্তবায়নের হারেও দেখা যায় নিম্নমুখিতা। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের ওপর কেউ আস্থা রাখতে পারছে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি অনির্বাচিত সরকার অনির্বাচিত সংসদে এই বাজেট দিয়েছে। সুশাসনের অভাবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বন্ধ, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, ব্যাংকে তারল্য সংকট। এমন পরিস্থিতিতে জনগণ এই বাজেট গ্রহণ করেনি, করবেও না।’

বিজ্ঞাপন

এতো কিছুর পরও বিএনপি কেন রাজপথে মিছিল-মিটিং করছে না?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা ওই সংস্কৃতি থেকে সরে এসেছি।’

তাহলে এই বাজেট থেকে জনগণ কী পেল? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘জনগণ পেল করের বোঝা। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ব্যবসায়ীকে অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে।’

জনগণের স্বার্থ যদি সংরক্ষণ না হয়, তাহলে বাজেটে কাদের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়েছেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে ব্যবসায়ী ও বিশেষ একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায়ও উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেড/একে

বাজেট বিএনপি মির্জা ফখরুল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর