Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অস্তিত্ব সংকটে ঐক্যফ্রন্ট


১২ জুলাই ২০১৯ ২২:৪৫

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রবীণ রাজনীতিক ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’র অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। এই জোটের আয়ু, কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে আছেন এর উদ্যোক্তরা। জোটের অন্যতম শরিক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এরই মধ্যে তার মাথা থেকে জোটের ‘অস্তিত্ব’ সরিয়ে ফেলেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দীর্ঘ এক বছর চেষ্টার পর গত বছর ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। আত্মপ্রকাশের দিন জোটে শরিকদল ছিল বিএনপি, ড. কামাল হোসন নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম আব্দুর রব নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। পরে এই জোটে যোগ দেয় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জৌলুস, তৎপরতা, কর্মকাণ্ড, জোট নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল, দেশি-বিদেশি মিডয়ার আগ্রহ— কোনো কিছুর কমতি ছিল না। খালেদা জিয়ার জায়গায় ড. কামাল হোসেন এবং কাণ্ডারিহীন বিএনপির জায়গায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়ে ওঠে বিরোধী রাজনীতি চর্চার বড় প্ল্যাটফর্ম।

কিন্তু নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর খোদ উদ্যোক্তারাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে বসেন। নির্বাচনের পরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির দুই সদস্য বিএনপির নীতিনির্ধারক ড. খন্দকার মোশাররফ ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জোট থেকে সরে দাঁড়ান। তাদের জায়গায় ড. মঈন খান ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কর্মকাণ্ডে গয়েশ্বরচন্দ্র রায়কে দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিবকে ফ্রন্টের কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের (ঢাকা মহানগর) সমন্বয়ক বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামকেও এখন আর জোটের কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না।

ড. কামাল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

জানতে চাইলে বরকত উল্লাহ বুলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়টি এখন আমাদের মহাসচিব দেখেন। ওখানে আমাদের আর খুব একটা যাওয়া হয় না। নির্বাচনের আগে জোটে অনেক কর্মকাণ্ড হতো। এখন কর্মকাণ্ড কম। আমাদের উপস্থিতিও কম।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল তা পূরণ না হওয়ায় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি যারপরনাই হতাশ। কিন্ত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে এখনও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক অটুট রাখার পক্ষে বিএনপির নীতিনির্ধারদের বড় একটি অংশ। অবশ্য এর বিপরীত ভাবনার লোকও আছে বিএনপিতে।

এদিকে জোটের বাকি শরিকরাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান। জোটের অন্যতম প্রধান শরিক বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে জোট নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

ক্ষমতার ভারসাম্য

এরইমধ্যে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলন করে জোটের ব্যাপারে তার অনাগ্রহের বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জোট নিয়ে খুব একটা তোড়জোর দেখাচ্ছেন না। আর জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব অনেকদিন ধরেই নীরব রয়েছেন। কেবল গণফোরাম নেতাদের মধ্যে জোট নিয়ে কিছুটা আগ্রহ দৃশ্যমান।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত ধানের শীষের ভোটব্যাংক কাজে লাগিয়ে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই জাতীয় ঐক্যফন্ট গঠন করেছিলেন গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতারা। আর বিএনপি চেয়েছিল খালেদা জিয়ার অবর্তমানে ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো জাতীয় নেতাদের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে।

ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ, কয়েকশ নেতাকর্মী আটক

কিন্তু নির্বাচনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের ফলে তাদের কারও স্বপ্নই পূরণ হয়নি। কেবল মাত্র গণফোরামের দুইজন প্রার্থীর লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। বিএনপির ভোটব্যাংক কাজে লাগিয়ে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবদিক বিবেচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম-ই লাভবান হয়েছে। সে জন্য এ দলটিই কেবল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে এখনও আগ্রহ দেখাচ্ছে। অন্যদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সে কারণেই ৩০ এপ্রিলের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হচ্ছে না।

ঐক্যফ্রন্টের সব শেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মসূচি না থাকা এবং একটি শরিক দলের সভাপতি ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে তার হতাশার কথা ব্যক্ত করায় অনেকেই হয়ত ভাবছে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জোট। আসলে বিষয়টি তা নয়। খুব শিগগিরই জোটের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হবে।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

৩০ ডিসেম্বর একাদশ নির্বাচন ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বিএনপি সংসদ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর